২ এর বেশি সন্তান হলে কাটছাঁট সরকারি সুবিধায়: প্রস্তাব রাজ্যসভায়! এতে কার লাভ, কাদের অসুবিধা?

নতুন করে দুই সন্তান নীতি নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। তিন তালাক বাতিল, অনুচ্ছেদ ৩৭০ উচ্ছেদ, রামমন্দির, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পর এবার সঙ্ঘের পাখির চোখ দুই সন্তান নীতি। কেন্দ্র এমন আইন আনলে তাকে সর্বাত্মক সমর্থনের কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। সঙ্ঘের মতে ভারতের বর্তমান অবস্থায় দুই সন্তান নীতি নেওয়া একান্ত অপরিহার্য। রাজ্যসভায় প্রাইভেট মেম্বার বিলের মাধ্যমে এই দাবি নথিভুক্তও করেছেন শিবসেনা সাংসদ। সব মিলিয়ে দুই সন্তান নীতি নিয়ে ফের একবার উত্তাপ ছড়াতে চলেছে জাতীয় রাজনীতির অন্দরে।
অসমের বিজেপি সরকার দুই সন্তান নীতি চালু করেছে। এর ফলে অসমে কোনও দম্পতির দুইয়ের বেশি সন্তান হলে স্বামী বা স্ত্রী সরকারি চাকরি পাবেন না। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অসমে লাগু হচ্ছে এই নিয়ম। অসমের সোনওয়াল সরকারের যুক্তি, প্রতিটি পরিবারের কাছে উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের সুবিধা পৌঁছে দিতে দুই সন্তান নীতি ভিন্ন উপায় নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিক থেকে এই সওয়াল একেবারে সঠিক। বর্তমান বিশ্বে জন বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি থাকা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হল এই নিয়মের নেপথ্যে থাকা রাজনীতি নিয়ে। এই আইন লাগু করে দিলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়বেন কারা?

সমস্যা কাদের?
এর ফলে স্বভাবতই সবচেয়ে বিপদে পড়বেন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষেরা। অসমে এই নীতির ফলে সমস্যা বাড়বে গরিব মানুষের, বিশেষ করে মুসলিম এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর। ঘটনাচক্রে ভারতে গরিব শ্রেণির সিংহভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং দলিত আদিবাসী। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবের পাশাপাশি সেই পরিবারগুলোতে শিক্ষার আলোও প্রবেশ করেনি বহু ক্ষেত্রেই। এই বাস্তবকে এড়িয়ে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে দুই সন্তান নীতি লাগু হলে সবচেয়ে বিপদে পড়বেন গরিব প্রান্তিক মানুষই। কারণ সেক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

লাভবান কারা?
শহর কিংবা গ্রামের সেই দম্পতি কিংবা মানসিকতার মানুষ, যাঁরা ইচ্ছা করেই দুই সন্তানের মধ্যে পরিবার সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই মানসিকতার প্রসার মূলত শিক্ষিত নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তের মধ্যে। বলাই বাহুল্য, সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে যদি একটি অংশ বাদ যায়, তাহলে বাকি অংশের সুবিধা।

সচেতনতার অভাব: একটি জ্বলন্ত উদাহরণ
একটি ছোট্ট উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক থেকে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম বিহার। সরকারি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, নীতীশ কুমারের রাজ্যে ৯৪ শতাংশ মহিলা গর্ভনিরোধকের ব্যাপারে জানেন। কিন্তু তা ব্যবহার করেন তার মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ সালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিহারে মহিলা প্রতি ৩.৪ হল সন্তান জন্ম দেওয়ার হার। দেশের মধ্যে পঞ্চম দরিদ্রতম রাজ্য বিহারে জন্মহার ভারতে সর্বাধিক।

বাস্তব পরিস্থিতি
জন্মহার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহু সন্তানের জন্ম দিয়ে চলা ভারতীয় মহিলা সমাজকে সচেতন করার একমাত্র হাতিয়ার শিক্ষা এবং আর্থিক স্বনির্ভরতা এ বিষয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা বলছেন, মহিলাদের শুধু শিক্ষা দিলেই সমস্যা মিটবে না। প্রয়োজন সমাজের মনোভাব পরিবর্তনেরও। আর সেটা করতে গেলে আঘাত হানতে হবে শতাব্দী প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়। কারণ ভারতের পরিবার এখনও সম্পূর্ণভাবে পুরুষতান্ত্রিকতায় নিমজ্জিত। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিপ্রেক্ষিতে যে সত্য আরও বেশি প্রকট।

Comments are closed.