সিএএ-এনআরসি দেশের আত্মার উপর হুমকি, খোলা চিঠি নাসিরুদ্দিন, রোমিলা থাপার, অমিতাভ ঘোষ, মীরা নায়ারদের

সংবিধানের মূল ভিত্তি আজ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, এই ভাষাতেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে খোলা চিঠি লিখলেন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, লেখক অমিতাভ ঘোষ, চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার সহ ৩০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
ওই খোলা চিঠিতে দেশজুড়ে এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। গত ১৩ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান কালচারাল ফোরামের তরফে একটি বিবৃতিতে তাঁরা লেখেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি হল দেশের আত্মার উপর হুমকি।
নাসিরুদ্দিন শাহ, মীরা নায়ার, রোমিলা থাপার, অমিতাভ ঘোষ, গায়িকা টি এম কৃষ্ণা, লেখিকা অনীতা দেশাই, কিরণ দেশাই, অভিনেত্রী রত্না পাঠক, নন্দিতা দাশ, অভিনেতা জাভেদ জাফেরি, সমাজতত্ত্ববিদ আশিস নন্দী, সমাজকর্মী সোহেল হাশমি, শবনম হাশমি সহ আরও অনেকের সই করা ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাত্রসমাজের পাশে আছি আমরা। দেশের সংবিধানের ভিত্তি, যা সমাজে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেয়, তার রক্ষার্থে ছাত্রদের ঐকান্তিক ও ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে আমাদের কুর্নিশ। আমরা জানি যে, সরকার সর্বদা প্রতিশ্রুতি পালনে সমর্থ হয়নি এবং আমরা অনেকেই অবিচারের বিরুদ্ধে নীরব থেকেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেশের পরিস্থিতি সম্মিলিত প্রতিবাদ দাবি করছে।
খোলা চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন নীতি সংসদে দ্রুত পাশ হয়ে যাচ্ছে। বিরুদ্ধ মত ও আলোচনার কোনও জায়গাই রাখা হচ্ছে না, যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও অখণ্ডতার বিরোধী। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা ও নাগরিকত্ব আজ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। নাগরিকপঞ্জিতে যে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই গরিব মানুষদের কাছে নেই, তার জন্য তাঁদের দেশছাড়া করা হতে পারে। আবার যাঁরা এনআরসি প্রক্রিয়ায় ‘অবৈধ’ নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন, তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের না হলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সাহায্যে নাগরিকত্ব পেতে পারেন। এটা দেশের সংবিধান বিরোধী বলে দাবি করেছেন ওই বিশিষ্টরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের পাশাপাশি কেন শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নয়া নাগরিক আইন থেকে বাদ রাখা হল। শ্রীলঙ্কা বা মায়ানমার মুসলিম প্রধান দেশ নয় বলেই কি নয়া আইন থেকে তাদের বাদ রাখা হল? বিবৃতিতে তাঁদের বক্তব্য, আইন প্রণয়নকারীদের কাজ দেখে মনে হচ্ছে, কেবল মুসলিম রাষ্ট্রেই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হন সংখ্যালঘুরা। না হলে মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা চিনের উইগুরদের কেন জায়গা হল না সংশোধিত নাগরিক আইনে? চিঠিতে লেখা হয়েছে, সরকার মনে করছে, ওই তিন দেশে মুসলিমরা নির্যাতিত হতে পারে না।

Comments are closed.