রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ মর্যাদা হারাল জম্মু-কাশ্মীর। সেই সঙ্গে মুছে গেল জম্মু-কাশ্মীর নামে রাজ্যটিও। পাশাপাশি সোমবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দু’টুকরো করা হচ্ছে। একটি অংশ কেন্দ্র শাসিত জম্মু-কাশ্মীর এবং অপর অংশটি কেন্দ্র শাসিত লাদাখ। অমিত শাহের প্রস্তাব মতো, জম্মু-কাশ্মীরে দিল্লির মতো বিধানসভা থাকবে, কিন্তু লাদাখে তা থাকবে না, ঠিক যেমন চণ্ডীগড় কিংবা দাদরা, নগর হাভেলি।
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর এখন থেকে জম্মু-কাশ্মীরে কেবলমাত্র ভারতীয় সংবিধান লাগু হবে। আগে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার মেয়াদ ছিল ৬ বছর, সোমবারের পর থেকে তা হবে ৫ বছর।
ধারা ৩৭০ এর বিশেষ ক্ষমতাবলে, জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা একই সঙ্গে দুটি নাগরিকত্ব পেতেন। প্রথম নাগরিকত্বটি কাশ্মীরি নাগরিক হওয়ার জন্য। এবং অপর নাগরিকত্বটি ইস্যু করত ভারত সরকার। অর্থাৎ, সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী একই সঙ্গে দুটি নাগরিকত্বের অধিকার পেতেন কাশ্মিরীরা। কিন্তু সোমবারের পর থেকে তাঁদের নাগরিকত্ব হবে শুধুমাত্র ভারতীয়। ৩৭০ ধারার বিলোপের পর জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব পতাকারও আর কোনও তাৎপর্য থাকবে না, উপত্যকায় একমাত্র মান্যতা পাবে ভারতীয় তেরঙ্গা। এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের জায়গা, নাম এবং সীমানা নিয়ে কেন্দ্র কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। কিন্তু এবার রাজ্য বিধানসভার মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে হবে না কেন্দ্রকে। পাশাপাশি, ভারতীয় দণ্ডবিধিও এখন থেকে কার্যকর হবে কাশ্মীরে। এতদিন পর্যন্ত কাশ্মীরে সেখানকার পৃথক আইনে অপরাধের বিচার হতো।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রাজ্যকে দু’ভাগে ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের তকমা দেওয়া হল। এর আগে বরাবরই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোকে স্বতন্ত্র রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হতো। কিন্তু এবারই প্রথম করা হল ঠিক উল্টো। স্রোতের সম্পূর্ণ বিপরীতে হেঁটে যেখানে স্বতন্ত্র রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হয়ে গেল। আগে সেখানে থাকতেন রাজ্যপাল বা গভর্নর, এবার থেকে সেখানে থাকবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। তবে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা থাকবে। রাজ্য থাকাকালীন জম্মু-কাশ্মীরের শাসনাধীন লাদাখ অঞ্চলও পৃথক কেন্দ্র শাসিত এলাকা হয়ে গেল। সেখানে অবশ্য বিধানসভা থাকবে না।
Comments