Lockdown: কী করছেন বাড়িবন্দি অরিন্দম শীল? কেন মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় বানাচ্ছেন শর্ট ফিল্ম? রেশমি বাগচির সঙ্গে কথা বললেন ব্যস্ত পরিচালক

রেশমি বাগচি: জীবন কতটা বদলাল গৃহবন্দি দশায়?

অরিন্দম শীল: জীবন তো অনেকটাই বদলাল। এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম, যা আমাদের জীবদ্দশায়ই শুধু না, সারা পৃথিবীও কখনও দেখেনি। সবচেয়ে বড় প্যানডেমিক বোধ হয় এর আগে প্লেগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রভাব এমন দুনিয়াজুড়ে হয়নি যা কোভিড 19 করল। তাই এই পরিস্থিতিতে ঘরে থাকতেই হবে। মনে করা ভালো, এটা আমাদের স্বেচ্ছা নির্বাসন। নির্বাসন সমাজের জন্য, দেশের জন্য, পরিবারের জন্য। জীবন আমাদের এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে আমরা যেভাবে জীবনকে দেখতে চাই, সেটা আর খাটবে না। জীবনের ধারার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে।

রেশমি বাগচি: বাড়ির কী কী কাজ এখন করছ, যা করা হয় না?

অরিন্দম শীল: কোভিড 19 থাকুক বা না থাকুক, আমি বরাবরই বাড়িতে আমার ভাগের যে কাজ, সেটা করি, এখনও করছি (তৃপ্তিসূচক হাসি)। অনেকেই বলছেন বাড়িতে দমবন্ধ লাগছে, একটু অন্যভাবে যদি ভাবি, মনুষ্য জন্মের ইতিহাস যা বলে, মানুষের মত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আর কোনও প্রজাতির নেই। আমরা যদি এর ইতিবাচক দিকগুলি দেখি, তাহলে এই পরিস্থিতিতেও জীবন অনেক শান্তির হতে পারে। তাছাড়া আমি যেহেতু প্রণামের সাথে যুক্ত, তাই শহরের বরিষ্ঠ নাগরিকদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া, খবর নেওয়া, এই সমস্ত কাজেও লিপ্ত আছি।

রেশমি বাগচি: মায়াকুমারীর কাজ কতদূর, পুজোয় রিলিজ করবে?

অরিন্দম শীল: হ্যাঁ, মায়াকুমারীর পুজোয় রিলিজ করার কথা, প্রথম এডিট হয়ে গেছে। লকডাউন শেষ হলেই শুরু করব ডাবিং আর ভিএফএক্সের কাজ। মিউজিকের কাজও অনেকটা এগিয়ে গেছে। বিক্রমের (ঘোষ) স্টুডিও খুললে বাকিটা হবে।

রেশমি বাগচি: নতুন স্ক্রিপ্ট নিশ্চয় লেখা শেষ? আগামী পরিকল্পনা কী রয়েছে?

অরিন্দম শীল: মিতিন মাসির দ্বিতীয় ড্রাফট হয়ে গেছে। ব্রেইনস্টর্মিং চলছে। মহানন্দার কাজও চলছে। তাছাড়া আরও দুটি স্ক্রিপ্টের কাজেও হাত দিয়েছি, একটি নতুন, একটি পুরনো। “খেলা যখন” এর স্ক্রিপ্ট একেবারে তৈরি। সেটার খুঁটিনাটি সব করে রাখছি। শুধু ডেটের অপেক্ষা। তাছাড়া অনেক বই পড়ছি। রাজশেখর বসুর মহাভারত পড়ছি। এদিকে আমার ব্যোমকেশ গোত্রের স্ক্রিপ্ট প্রকাশিত হয়েছে। এবার দ্বিতীয় এডিশন বেরোবে। তার প্রুফ চেকিংয়ের কাজ চলছে।

রেশমি বাগচি: করোনা পরবর্তী ইন্ডাস্ট্রিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে হচ্ছে?

অরিন্দম শীল: সাংঘাতিক পরিবর্তন আসতে চলেছে। প্রথমত, কবে সিনেমা হলগুলো খুলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। আমার ধারণা পুজোর ঠিক আগে হয়ত হলগুলো আবার স্বমহিমায় ফিরতে পারে। এর ফলে এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে বিশাল ধাক্কা আসতে চলেছে। কীভাবে এই বিপুল ক্ষতি সামলানো যাবে জানি না। তবে একটা পালাবদল হচ্ছে বা চলছে তা হল, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। তার প্রতি ঝোঁক আরও বাড়বে।

রেশমি বাগচি: যাঁদের পরিবার দৈনিক বেতনের ওপর চলে, সেই সব টেকনিশিয়ান, লাইটম্যান, স্পট, অডিও, মেকআপের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কথা কী ভাবছ?

অরিন্দম শীল: যাঁদের কথা বললে তাঁরা ছাড়াও আছে জুনিয়র আর্টিস্টরা। আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি নিজে একটি উদ্যোগে রয়েছি, গৌতম ঘোষ আছেন, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে স্বরূপ বিশ্বাস, সবাই একসাথে চেষ্টা করছি। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ অর্থ সাহায্য করেছেন। আরও অনেকেই নিজের সাধ্যমত টাকা ফান্ডে জমা দিচ্ছেন। ফেডারেশন দেখছে যাতে সবার কাছে সাহায্য পৌঁছোয়।

রেশমি বাগচি: এর পাশাপাশি একটি শর্ট ফিল্মও তৈরি করছেন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, তার সম্পর্কে বলুন, কীভাবে কাজ হচ্ছে?

অরিন্দম শীল: প্রত্যেক কলাকুশলী, বাড়ি থেকেই কাজ করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর লেখা গান, “ঝড় থেমে যাবে একদিন”, এই ফিল্মের সুর বেঁধে দিয়েছে। এই শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হবে সেই সব টেকনিশিয়ানদের হাতে যাঁদের কোনও রোজগার নেই এখন। আমার ইচ্ছে সব অভিনেতাদের নিয়ে ফিল্মটি বানানোর। প্রসেনজিৎ চেট্টাপাধ্যায়, নুসরত, মিমি, রুক্মিণী, শুভশ্রী, আবীর, পরম, কোয়েল, পরাণদা সকলেই আছেন। আরও অনেকে যোগ দেবেন।

রেশমি বাগচি: এই সময়ের কথা তোমার ফিল্মে উঠে আসবে?

অরিন্দম শীল: এই সময়ের কথা তো উঠে আসছেই। মিতিন মাসিতেই থাকছে উল্লেখ, ইতিমধ্যেই স্ক্রিপ্টেড।

রেশমি বাগচি: আমরা কি সত্যিই শুধরাবো মনে হয়? প্রকৃতিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হব?

অরিন্দম শীল: এরপরেও যদি শিক্ষা না পাই তবে কবে পাবো? কোথাও গিয়ে কলি যুগের মিথটা সত্যি হতে চলেছে। প্রকৃতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতি কী ছিল, আর আমরা অনবরত তাতে আঁচড় কাটতে কাটতে তার কী হাল করেছি। মান্না দের একটা গানের লাইন মনে পড়ে গেল…. মানুষ খুন হলে মানুষই তার বিচার করে, নেই তো খুনির মাফ, তবে কেন পায় না বিচার নিহত গোলাপ…. গোলাপের মতই আমরা প্রকৃতিকে খুন করে চলেছি। এখন যদি না শুধরোই তাহলে বোধহয় অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। এরকম মহামারি আরও হবে, আর আমরা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবো।

রেশমি বাগচি: এই ক্রাইসিসে পড়ার কিছুদিন আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক হানাহানিতে বিধ্বস্ত ছিলাম আমরা, অথচ এখন আমরা একে অপরের ভালো থাকা নিয়ে ভাবছি, it seems like an ideal world, একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে এই পরিবর্তনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?

অরিন্দম শীল: যদি সত্যিই এটা হত, তাহলে এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারত না। কিন্তু এখনও রাজনীতি চলছে, এখনও ধর্ম নিয়ে খেলা চলছে। সেজন্য এই যে একটা ইউটোপিক আইডিয়াল ওয়ার্ল্ড তৈরি করার প্রচেষ্টা, purity of unity বলে যা করা হচ্ছে, সেটাও একটা রাজনীতির খেলা চলছে। তাই আমাদের এসবের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। আমার ধারণা বিশ্বের নাগরিক রাজনীতির হানাহানি আর চায় না।
কোভিড 19 এর বিপদ আমাদের এক করেছে। প্রকৃতির কাছে যে আমরা সবাই এক, সেটাও আমরা বুঝেছি। আমরা মানুষ। প্রধানমন্ত্রী হোন বা সুপারস্টার, কৃষক হোন বা ফুটপাতবাসী, আসলে প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান।

রেশমি বাগচি: শুক্লাদি কী বলছে, তুমি সারাদিন বাড়িতে, দাম্পত্য কলহ বাড়ল নাকি প্রেম বাড়ল?

অরিন্দম শীল: দাম্পত্য কলহও বাড়েনি, প্রেমও বাড়েনি। যেটা হয়েছে সেটা হল অনেকটা সময় একসাথে থাকা। আমি এবং শুক্লা, দুজনেই এতো ব্যস্ত থাকি এতটা সময় বাড়িতে কখনও থাকিনি। তাই এই সময়টা কলহ করে কাটানোর ইচ্ছে আমাদের কারওরই নেই।
আজ কলহের দিন না। আকাশ এত পরিষ্কার, এ প্রান্ত ও প্রান্ত দেখতে পাচ্ছি। বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি। শুনতে পাচ্ছি জীবনের শব্দ। এটা একটা বিরাট পাওনা। এই পরিবেশে মানুষ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে, আমার বিশ্বাস।

Comments are closed.