বাংলায় একুশের নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু বহিরাগত বনাম ভূমিপুত্র। আরও সহজ করে বললে, বাংলাভাষী ভোটার বনাম হিন্দিভাষী। বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে বাংলা শাসনের ভার বাঙালির হাতেই থাকবে, অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি তারা হিন্দি ভাষীদের বিরুদ্ধে নয়। ভোটের মুখে যাঁরা শুধু মাত্র নির্বাচনী প্রচারের জন্য বাংলায় এসেছে ঘাসফুল শিবির তাঁদের বিরুদ্ধে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী সকলেই ভোট প্রচারে এসে বাঙালি আবেগে শান দিতে বাংলা বলার চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতিতে ১০ এপ্রিল রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচন।
বাংলার চতুর্থ দফার ভোটের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র বালি। বালির গতবারের তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া এবার বিজেপি প্রার্থী। ভোটের মুখেই তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হন বৈশালী ডালমিয়া। রাজীব ব্যানার্জিদের সঙ্গে তিনিও চার্টার্ড বিমানে দিল্লি গিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বালিতে এবারে লড়াই দ্বিমুখী। ঘাসফুল শিবিরের রানা চ্যাটার্জি বনাম সিপিএমের তরুণ মুখ দীপ্সিতা ধর। এদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই একটি টিভি অনুষ্ঠানে এসে নিজের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হওয়ার আগেই তৃণমূলের মুখ্পাত্র কুনাল ঘোষকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সদ্য বিজেপিতে যাওয়া বৈশালী। বলেছিলেন, তিনি বালি থেকেই বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন এবং জিতবেন।
অন্যদিকে SFI এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদককে বালিতে প্রার্থী করে চমক দিয়েছে সিপিএম। এক সময় লালদুর্গ নামে পরিচিত বালি বিধানসভার অলিগলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তরুণ সিপিএম প্রার্থী। প্রচারে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি দীপ্সিতার। জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী JNU এর তরুণ গবেষক। এই পরিস্থিতিতে বালি বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে অন্যতম নির্ধারক শক্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এখানকার অবাঙালি ভোট।
হুগলি নদীর পশ্চিম তীরের এই কেন্দ্র আপাতদৃষ্টিতে বাঙালি অধ্যুষিত জনপদ হিসেবে পরিচিত হলেও, এখানকার অবাঙালি ভোট ব্যাঙ্ককে কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে বালি কেন্দ্রে বাঙালি ভোটার ৪৩%, অবাঙালি ভোটার ৪২%। সংখ্যালঘু ভোটার ১৪%।
অবাঙালি ভোটারদের মন পেতে তৎপর সব পক্ষই। বিজেপি প্রার্থী বৈশালী ডালমিয়া কয়েকদিন আগেই বালিতে প্রচারে এনেছিলেন ভোজপুরি সিনেমার মহাতারকা রবি কৃষন এবং মনোজ তিওয়ারীকে। বিহারের আঞ্চলিক সিনেমার তারকা বালিতে ভোট প্রচারে এই প্রথম। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বালির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত যে এলাকা সেই চত্বরে তাঁরা রোড-শো করেননি।
বালি বিধানসভার অবাঙালি অধ্যুষিত জায়গা বলে পরিচিত, লিলুয়ার মাতোয়ালা ব্রিজ থেকে ডোনবক্স পর্যন্ত রোড-শো করেন তাঁরা।
আর এতেই বাঁকা হাসি তৃণমূলের মুখে। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার দাবি, বাঙালি-অবাঙালি, হিন্দু মুসলিম বিভাজন করছে বিজেপি। না হলে কেন্দ্রটার নাম বালি, অথচ ওঁদের তারকা প্রচারকের কর্মসূচি থেকে বাদ খাতায় কলমে বালির প্রধান এলাকাগুলো!
তৃণমূলের বিভাজনের অভিযোগ মানতে নারাজ বিজেপি। এক বিজেপি সমর্থকের কথায় বালির নবীন সংঘ মাঠে মিঠুন চক্রবর্তী এসেছিলেন প্রচারে। নাড্ডাজিও ক’দিন আগে রোড শো করেছেন।
দুই দলের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সিপিএম। সিপিএমের স্থানীয় নেতার দাবি, তৃণমূলের হয়ে পাঁচ বছর কাজ করতে পারেননি এখানকার বিধায়ক, এখন বিজেপিতে গিয়েছেন কাজ করার আশায়! মানুষ দুই দলের ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলেছেন। বালির মানুষ দীপ্সিতার সঙ্গেই রয়েছে।
সত্যিই কি দীপ্সিতার সঙ্গে বালির মানুষ? ৪২% হিন্দিভাষী ভোটার কার পক্ষে যাবেন? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ২ মে।
Comments are closed.