ফরাসি সরকার আগেই আঁচ করেছিল ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন আরও ব্যাপক ও বৃহত্তর হতে পারে। শনিবার প্যারিসসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৮৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। শুধু প্যারিসেই প্রহরায় ছিল প্রায় ৮ হাজার পুলিশ কর্মী। আইফেল টাওয়ার, লুঁভর মিউজিয়ামসহ প্যারিসের সমস্ত দর্শনীয় স্থান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দোকান-পাট ও শপিং মল।
শনিবার সেন্ট্রাল প্যারিসে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। পুলিশের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেড় হাজারের বেশি আন্দোলনকারী চ্যাম্পস ইলিসিস বোলেভার্ডে জড়ো হয়েছিল। ২১১ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে হাতুড়ি, বেসবল ব্যাট, ধাতব বল ইত্যাদি। বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, লুঠ করে দোকান। প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপ ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেলে জানান, প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে এই হিংসাত্মক আন্দোলন ঠেকাতে। প্রশাসনের তরফ থেকে আন্দোলনকারীদের আবেদন করা হয় শান্তি বজায় রাখার। কোনও অস্ত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। পুলিশ প্রচার করে, ‘অনেক বিক্ষোভ হয়েছে, এবার আলোচনায় আসুন’। কিন্তু তাতেও ‘ইয়েলো ভেস্ট’রা বিক্ষোভ জারি রাখে। আক্রমণ করা হয় পুলিশকে।
প্যারিস শহর দৃশ্যত যুদ্ধ ময়দানে পরিণত হয় শনিবার। ক্রিসমাসের আগে চেনা প্যারিসের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। বন্ধ আইফেল টাওয়ার, বন্ধ লুঁভর মিউজিয়াম। যে কয়েকজন পর্যটক আছেন তাঁরা হোটেলের ঘরে বন্দি। লুটপাঠ এড়াতে দোকান-বাজারও একরকম বন্ধ। মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে ফ্রান্সে থাকা পর্যটকদের বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের ভিড় এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, বেলজিয়াম,পর্তুগাল এবং চেক প্রজাতন্ত্র থেকে দেশের মানুষকে বারণ করা হচ্ছে ফ্রান্সে বেড়াতে যেতে।
‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপাতে ডাক দিয়েছে। তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াইকে ‘অ্যাক্ট ফোর’ বলে অবহিত করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনে নির্দিষ্ট কোনও নেতা না থাকায় প্রশাসনের পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়েছে।
পেট্রোপণ্যের মূল্য হ্রাস, ট্যাক্স কমানো, বিভিন্ন পেশায় পারিশ্রমিক বাড়ানো, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং সর্বোপরি প্রেসিডেন্ট মাঁকরের ইস্তফার দাবিতে চার সপ্তাহ ধরে চলা এই বিক্ষোভ শনিবার আরও হিংসাত্মক চেহারা নেয়। দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণী ‘ইয়েলো ভেস্ট’কে সর্বান্তকরণে সমর্থন করছেন। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট কেবল উচ্চবিত্তদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত। যদিও, প্রেসিডেন্ট মাঁকর গত সপ্তাহে প্রতিশ্রুতি দেন, ২০১৯ সালের মধ্যে পেট্রোপণ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গ্যাসের দাম কমানোর। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। প্রতিশ্রুতিতে ভোলেনি আন্দোলনকারীরা। ‘ইয়েলো ভেস্ট’রা তাদের দাবিতে অনড় থেকে বিক্ষোভ জারি রেখেছে।
Comments are closed.