আরবিআই গভর্নরের পদ থেকে উর্জিত প্যাটেলের ইস্তফার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে একরকম কাঠগোড়ায় তোলা হল বিজেপি সরকারকে। প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা এবং সরকারের বিরোধের জেরেই এই পদত্যাগ বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে। এক সময়ের সরকারের ‘কাছের লোক’ উর্জিত প্যাটেল কেন ইস্তফা দিলেন, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কে যে আপৎকালীন তহবিল গচ্ছিত রয়েছে তার একটা বড় অংশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছিল, যা কেন্দ্রকে দিতে অস্বীকার করেছিলেন উর্জিত প্যাটেল। এই কারণেই মতানৈক্য হয় কেন্দ্রের সঙ্গে উর্জিতের এবং একেই আরবিআই গভর্নরের পদত্যাগের একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’।
‘ব্লুমবার্গ’ দাবি করেছে, অনেকগুলি ইস্যু নিয়েই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় উর্জিত প্যাটেলের। যার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার অর্থনীতিবিদ এস গুরুমূর্তির আরবিআই বোর্ডে সদস্য নিযুক্ত হওয়া একটা বড় কারণ। গুরুমূর্তি এবং আরবিআই-এর মধ্যে একাধিক বিষয়ে বিরোধ ছিল বলে দাবি করা হয়েছে সেখানে। তবে সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত না মেনে উর্জিত প্যাটেলের ইস্তফার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ‘ব্লুমবার্গ’। কিন্তু ইস্তফা পত্রে তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ না দেখিয়ে ‘আসল কারণ’ ব্যাখ্যা করতে পারতেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ব্লুমবার্গের রিপোর্টে।
অন্যদিকে, উর্জিতের পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে ‘শকিং’ বলে মন্তব্য করেছে পাকিস্তানের দৈনিক ‘দ্য ডন’। ‘দ্য ডন’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের বাজারে টাকার দাম কমে যাওয়া, আরবিআই নির্ধারিত ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে কেন্দ্র খুশি ছিল না। এছাড়াও অক্টোবর মাসে ডেপুটি গভর্নর ভিরাল আচার্যের বিস্ফোরক বক্তব্যের জেরে এই সংঘাত আরও তীব্র হয়। এসব কারণেই ২০১৯ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান উর্জিত। ‘দ্য ডন’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্রের সঙ্গে আরবিআই সংঘাত যে নিছক গুজব ছিল না, তারও প্রমাণ পাওয়া গেল এই ইস্তফায়।
উর্জিতের ইস্তফার প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম মন্তব্য করেছেন, ‘দুঃখজনক খবর, তবে অবাক হওয়ার মতো নয়। কোনও পণ্ডিত বা বিদ্বানের পক্ষে এই সরকারের আমলে কাজ করা অসম্ভব।’
সব মিলিয়ে উর্জিতের পদত্যাগে দেশের বিরোধীদের মতোই আন্তর্জাতিক দৈনিকগুলিও আরবিআই-এর সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাতের দিকেই আঙুল তুলেছে। পাশাপাশি এর জন্য নিশানা করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে।
এরই মধ্যে আরবিআই-এর নতুন গভর্নর কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এই দৌড়ে রয়েছেন প্রাক্তন অর্থ সচিব শক্তিকান্ত দাস, অর্থনীতিবিদ সুভাষ চন্দ্র গর্গ ও সেবি চেয়ারম্যান অজয় ত্যাগী।
Comments are closed.