সাবরীমালা মন্দিরে দুই মহিলার প্রবেশের বিরোধিতায় কেরলজুড়ে তাণ্ডব বিজেপির, আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম, বৃহস্পতিবার বনধের মন্দির কমিটির
দুই মহিলা কেন প্রথা ভেঙে সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছেন, এই অভিযোগ তুলে বুধবার সারা দিন কেরলজুড়ে কার্যত তাণ্ডব চালালো বিজেপি-আরএসএস। কেরলের সিপিএম সরকার মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ করানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সমালোচনা করে একযোগে পথে নেমেছে বিজেপি-কংগ্রেস।
বুধবার সকাল থেকে কেরলের বিভিন্ন জায়গায় চূড়ান্ত অরাজকতার সৃষ্টি করে বিজেপি নেতা ও কর্মীরা। মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে আরাধ্য দেবতা আয়াপ্পাকে অপবিত্র করেছেন দুই ঋতুমতী মহিলা, এই অভিযোগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হরতাল এবং মিছিল শুরু করে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা। জায়গায় কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি। তাদের রাস্তা অবরোধে ব্যাপক অসুবিধেয় পড়েন সাধারণ মানুষ।
সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেঙে তাঁদের হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ উঠছে। রাজ্যের মন্ত্রী কদাকম্পালী সুরেন্দ্রানের সভা ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালায় বিজেপি সমর্থকরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখায় ডানপন্থী সংগঠনগুলি। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে বিক্ষোভকারীদের। কেরলের রাজধানী শহরের বিভিন্ন রাস্তা আটকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে বিজেপি। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকান-বাজার। পথ চলতি গাড়ি থামিয়ে আক্রমণ করা হয় গাড়ি চালকদের। থিরুভন্থপুরমে কয়েকজন সাংবাদিককে শারীরিক হেনস্থা করা হয়, ভেঙে দেওয়া তাঁদের ক্যামেরা। মালায়ালাম মনোরমার চিত্র সাংবাদিক বিষ্ণু ভি সানালকে বেধড়ক মারধর করে কয়েকজন বিক্ষোভকারী। পুলিশ কর্মীদের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে তারা। আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। মাথরুভূমি সংবাদমাধ্যমের একাধিক সাংবাদিককে মারধর করা হয়। বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী মহিলা মোর্চা অংশগ্রহণ করেছে বিক্ষোভে।
ইদাপল্লীসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জাতীয় সড়কও থমকে গিয়েছে বিজেপির এই অরাজকতায়। সব মিলিয়ে বিজেপির তাণ্ডবে রাজ্যের একাধিক জায়গায় স্বাভাবিক জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কেরল বিজেপির সভাপতি পি এস শ্রীধরণ পিল্লাই দাবি করেন, সরকার সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করলে তার আঘাত তো পড়বেই। বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রমেশ চিন্নাথালার উক্তি, এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নিজে। শতাব্দী প্রাচীন প্রথাকে ভেঙে অন্যায় করেছে বাম সরকার। কংগ্রেস সভাপতির দাবি, আর একবারও যাতে মন্দিরে কোনও মহিলা প্রবেশ করতে না পারেন তার ব্যবস্থা করুক সরকার।
অন্যদিকে, মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবিতে, বৃহস্পতিবার ১২ ঘন্টার বনধ ডেকেছে ‘সাবরীমালা কর্ম সমিতি’। পুরোহিতদের তোয়াক্কা না করে বিন্দু ও কণকদুর্গার সাবরীমালার গর্ভগৃহে প্রবেশের পর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বন্ধ করে দেন মন্দির। ‘অপবিত্র’ হয়েছেন দেবতা, এই অভিযোগ করে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে মন্দির ‘শুদ্ধ’ করার কাজ।
Comments are closed.