স্বাধীনতার আগে থেকে কলমের চিকিৎসা করে আসছে; পড়ুন কলকাতার ‘অদ্ভুত’ হাসপাতালের কথা 

পেন হাসপাতাল। নামটি শুনে অর্থ বোঝা গেলেও কিছুটা ধন্দে পড়তে হয়। পেনের আবার হাসপাতাল! কলমেরও চিকিৎসা হয়! প্রথমে এই প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতেই পারে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, কলমেরও চিকিৎসা হয়। তাও আবার এই কলকাতাতেই। এবং সেটি হয়ে আসছে সেই স্বাধীনতার আগে থেকে। এই প্রতিবেদনে তেমনই এক ‘অদ্ভুত’ হাসপাতালের কথা রইল। 

এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের ৪ নম্বর গেট থেকে বেরোলে বাঁ হাতেই একটি গলি পড়ে। কয়েক পা হাঁটলেই দেখা মিলবে ‘পেন হাসপাতালের’। উপহারে পাওয়া সাধের ফাউন্টেন পেনের নিব ভেঙে গিয়েছে, কিংবা কোনও কলমের চ্যানেল খারাপ হয়ে গিয়েছে বা কলমের টিউব পাল্টাতে হবে। কলমের যে কোনও ‘অসুখ’ই সেরে উঠবে এই পেন হাসপাতালে এলে। শুধু কলম সারাই নয়, দেশ বিদেশের দুষ্প্রাপ্য সব পেনের সংগ্রহও রয়েছে এখানে। 

শেফার্স, পার্কার, পাইলট, ভিসকন্টি, কাওয়েকো, মঁ ব্লাঁ, ওয়াটারম্যান, পাইলট, সেইলর, অরোরা, পেলিকান — নানা ধরনের বিদেশি কলমের সঙ্গে ক্লিক, আসা, ম্যা গনা কার্টা, গামা, রঙ্গা, কানরাইট ইত্যাদি দেশি কলম এক সময়ে বাজারে ছেয়ে থাকত। এদের আবার অনেকগুলোর দামও আকাশ ছোঁয়া। বর্তমান সময়েও দেশ বিদেশে এরকম বহু মানুষ রয়েছেন যাঁদের সংগ্রহে এন্টিক সব পেন রয়েছে। কোনওটির বয়স পঞ্চাশ তো আবার কোনওটির একশোরও বেশি। এদের অনেকেই পেন সারাই করতে অথবা ‘সার্ভিস’ করতে ধর্মতলার এই প্রাচীন পেন হাসপাতালে ঢুঁ মারেন। 

 

দোকানটির বর্তমান মালিক মহম্মদ ইমতিয়াজ। তিনি এই ব্যবসায় তৃতীয় প্রজন্ম। জানা যায়, ইমতিয়াজের দাদু মহম্মদ সামসুদ্দিন ১৯৪৫ সালে বিহার থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই এই হাসপাতালের পথ চলা। এরপর ১৯৮০ সালে বাবা মহম্মদ সুলতানের হাত থেকে দোকানের দায়িত্ব নেন ইমতিয়াজ এবং তাঁর ভাই মহম্মদ রিয়াজ। ভাইয়ের মৃত্যুর পর ছেলে এবং ভাইপোকে নিয়ে একাই দোকান সামলাচ্ছেন ইমতিয়াজ। 

এখনও দেশের নানান প্রান্ত থেকে এন্টিক পেনের কালেক্টররা এই পেন হাপাতালে আসেন। সাহিত্যিক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে চিত্র পরিচালক, অভিনেতা। দোকানের শুরুর দিন থেকে এখনও বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি দোকানের ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন। জানা যায়, এক সময়ে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ও পেন হাসপাতালে আসতেন। এখনও দোকানে গেলেই দেখা মিলবে মেরামতের জন্য একধিক ভিন্টেজ পেনের। ফাউন্টেন পেনের পাশপাশি বল পেন, নিউ মডেল সহ হরেক রকম পেনই দেখতে পাবেন, যেগুলোর কোনওটির দাম ২০ টাকা আবার কোনওটির ২০ হাজার। 

Comments are closed.