আদানি গোষ্ঠীর দুটি মামলা নিয়ম না মেনে অবকাশকালীন বেঞ্চে ফয়সালা হল কেন, প্রধান বিচারপতিকে চিঠি আইনজীবী দাভের

আদানি গোষ্ঠীর দুটি মামলার শুনানি নিয়ম মেনে হয়নি। এই অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিলেন সিনিয়র আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, মামলা দুটি অবকাশকালীন বেঞ্চেই ফয়সালা করা হয়, যা সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম বিরুদ্ধ। তাঁর আরও অভিযোগ, দুটি মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থা।
প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে সিনিয়র আইনজীবী যে দুটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন, তার প্রথমটি হল, পারসা কেন্টা কোলিয়ারি বনাম রাজস্থান রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম (আরআরইউভিএনএল) মামলা। এই মামলাটি চলে বিচারপতি মিশ্র এবং বিচারপতি শাহের এজলাসে। পারসা কেন্টা কোলিয়ারি আরআরইউভিএনএলের অন্তর্গত একটি সংস্থা। যা আদানিদের সঙ্গে আরআরইউভিএনএলের যৌথ উদ্যোগে কয়লা উত্তোলনের কাজ করে।
চিঠিতে এই মামলার শুনানিতে বেনিয়মের অভিযোগ করেছেন দুষ্মন্ত দাভে। তাঁর প্রশ্ন, প্রধান বিচারপতির তৈরি করে দেওয়া নিয়ম নীতি মেনে কি এই ঘটনা হয়েছে? তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, ২০১৯ সালের অবকাশকালীন বেঞ্চের তালিকায় এই মামলাটি ছিল না, চিঠিতে অভিযোগ করেছেন তিনি।
দ্বিতীয় যে মামলাটির কথা দাভে চিঠিতে লিখেছেন তা হল, আদানি পাওয়ার (মুন্দ্রা) বনাম গুজরাত ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন এবং অন্যান্যদের। গত ২৪ শে মে মামলাটির শুনানি হয় বিচারপতি শাহ এবং বিচারপতি মিশ্রর এজলাসে। রঞ্জন গগৈকে লেখা চিঠিতে দাভের অভিযোগ, বিপক্ষের আইনজীবীদের আপত্তি উপেক্ষা করে মামলার রায় স্থগিত রাখা হয়।
এরপরেই চিঠিতে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি। দুষ্মন্ত দাভে লিখেছেন, আমি জানতে পেরেছি, এই দুটি মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে। ভুলভাবে দুটি মামলার শুনানি হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি লিখেছেন, জনস্বার্থ এবং রাজস্বের পরোয়া না করে যেভাবে গোটা ব্যাপারটি ঘটেছে তা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে মর্যাদা হানিকর। যেভাবে একটি বড় কর্পোরেট হাউসের নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার অবকাশকালীন এজলাসে তুলে ধরে তার বিচার প্রক্রিয়া চলল এবং সব শেষে তাদের অনুকূলে রায় গেল, তা অত্যন্ত বিরক্তিকর। চিঠিতে লিখেছেন সিনিয়র আইনজীবী।
পাশাপাশি প্রধান বিচারপতিকে এই সিনিয়র আইনজীবী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে করা সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিদের প্রেস কনফারেন্সের প্রসঙ্গ। সেই সাংবাদিক বৈঠকে বর্তমান প্রধান বিচারপতিও হাজির ছিলেন। সেই সময় তাঁরা আপত্তি তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক দিক নিয়ে। একাধিক স্পর্শকাতর মামলা কয়েকটি বিশেষ এজলাসেই কেবল দেওয়া হচ্ছে, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী, এমনই অভিযোগ ছিল সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতিদের।
সেই সময় যে বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের আপত্তি নথিভুক্ত করেছিলেন সিনিয়র বিচারপতিরা, আজও সেই পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র বদল হয়নি বলেই মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। এই প্রেক্ষিতেই তাঁর চিঠি প্রধান বিচারপতিকে, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

Comments are closed.