একাধিক মহিলাকে যৌন হেনস্থার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রাক্তন সাংবাদিক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবরের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

‘মি টু’ মুভমেন্টের ধাক্কায় বেসামাল বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত একের পর এক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। কাউকে তাঁর কর্মস্থল থেকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে, কারও বিরুদ্ধ আবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। এবার ‘মি টু’ মুভমেন্টের আঁচ এসে পড়ল কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর। প্রাক্তন সাংবাদিক, সম্পাদক এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে একাধিক মহিলাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ সামনে আসায় চাঞল্য ছড়িয়েছে দেশের রাজধানীতে। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে আকবরের পদত্যাগ দাবি করেছে বিরোধী কংগ্রেস।
মঙ্গলবারই এক মহিলা সাংবাদিক দেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক এম জে আকবরের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণ এবং যৌন ইঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। বুধবার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে আকবরের ইস্তফা দাবি করল কংগ্রেস।
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস সাংসদ জয়পাল রেড্ডি বলেন, ‘হয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্তোষজনক উত্তর দিন, নয়তো পদত্যাগ করুন এম জে আকবর’। কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তেওয়ারির মতে নীরবতা কোনও সমাধান নয়, তাই অভিযুক্ত মন্ত্রী অথবা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলুন। তবে আকবর বর্তমানে নাইজেরিয়ায় থাকায় তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না সংবাদমাধ্যম।
এবিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া থেকে এখনও পর্যন্ত বিরত থেকেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য। মঙ্গলবার এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনিও এই ঘটনাকে বহির্ভূত বিষয় বলে উত্তর এড়িয়ে যান। একমাত্র ব্যতিক্রম কেন্দ্রীয় নারি ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী। অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন মানেকা। তিনি বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।’ তাঁর মতে, ‘ক্ষমতার শীর্ষে থাকা পুরুষেরা প্রায়শই এমন ঘটনা ঘটান, যা মিডিয়া, রাজনীতি, অফিস সর্বত্র প্রযোজ্য। এখন যখন মহিলারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তখন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।’
উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় আকবরের বিরুদ্ধে ৬ মহিলা যৌন হেনস্থা ও অভব্য আচরণের অভিযোগ এনেছেন। প্রিয়া রামানি নামে এক সাংবাদিক মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, ১৯৯৪ সালে মুম্বইয়ের একটি হোটেলে ইন্টারভিউয়ের নামে ডেকে তাঁর সাথে অসভ্য আচরণ করেন এম জে আকবর। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩ আর আকবরের ৪৩ বছর। লবির বদলে ওই মহিলা সাংবাদিককে হোটেলের রুমে যেতে বলেন আকবর। সেখানে আকবর তাঁকে মদ্যপানের প্রস্তাব দেন। প্রিয়ার দাবি, তিনি মদ খেতে অস্বীকার করলে আকবর গুণগুণিয়ে পুরনো দিনের গান গাইতে শুরু করেন ও তাঁকে পাশে গিয়ে বসতে বলেন।
গত বছর এই মহিলা সাংবাদিক আকবরের নাম উল্লেখ না করলেও, মঙ্গলবার তিনি তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনার পর সংবাদমাধ্যম জগতে হইচই পড়ে যায়। আরও অন্তত পাঁচ জন মহিলা সাংবাদিক বিভিন্ন সময় তাঁদের সঙ্গে আকবর অভব্য আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ এনেছে। কংগ্রেস আকবরের পদত্যাগ দাবি করার পর এই সংবেদনশীল বিষয়টি নয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপি।

Comments are closed.