জেমস ওয়েবের নামের নেপথ্যের কারণ কী? ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তোলা এই টেলিস্কোপ নিয়ে আর কী জানা যায়? 

বিগ ব্যাং থেকে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে ১৩৭০ কোটি বছর আগে। আর জেমস যে নক্ষত্রপুঞ্জ-এর ছবি পাঠিয়েছে তা ১৩০০ কোটি বছর আগের। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ছবি। এই অসাধ্য সাধন ঘটিয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিমি দূরে L2 পয়েন্টে (যেখানে পৃথিবী এবং সূর্যের মহাকর্ষ বল সমান) যার বর্তমান অবস্থান। ব্রহ্মাণ্ডের প্রাচীনতম ছবি ঘিরে ফের একবার সংবাদের শিরনামে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। মহাকাশে থাকা সব থেকে শক্তিশালী এই টেলিস্কোপ সম্পর্কে আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি

মার্কিন স্পেস সেন্টার নাসার দ্বিতীয় প্রশাসক ছিলেন জেমস ই। অ্যাপোলো অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর নামানুসারে টেলিস্কোপের নাম রাখা হয় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বা JWST. ১৯৯০ দশকে মহাকাশে যাত্রা শুরুর কথা ছিল জেমসের। তখন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু হয়। অবশেষে ২০২১ সালের বড়দিনের দিন মহাকাশে পাড়ি দেয় জেমস। নাসার সঙ্গে যৌথ ভাবে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এবং কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও এই অভিযানে সামিল ছিল। জেমসকে তৈরি এবং মহাকাশে উৎক্ষেপণ করতে খরচ হয়েছে ১০০০ কোটি ডলার। 

নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জেমসকে নেক্সট জেনারেশন স্পেস টেলিস্কোপের তকমা দিয়েছিলেন। জেমস টেলিস্কোপের বিশেষত্ব হল, এটি ইন্ফ্রায়েড পর্যবেক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই টেলিস্কোপে এমন অনেক কিছু যোগ করা হয়েছে যা আগে কোনও টেলিস্কোপে ব্যবহার করা হয়নি। 

কীভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলতে সক্ষম হল জেমস? 

নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জেমস টেলিস্কোপটি ইন্ফ্রায়েড বা অবহেলিত আলোয় কাজ করবে। অর্থাৎ, নক্ষত্র জন্ম হওয়ার স্থানগুলি ধূলিকণা, গ্যাস, মেঘে ঢাকা থাকা। কয়েকশো আলোক বর্ষ দূরে ধূলোমেঘে ঢাকা স্থানগুলো দেখতে ইন্ফ্রায়েড আলোর প্রয়োজন। জেমস টেলিস্কোপে এই ইন্ফ্রায়েড ব্যবস্থা থাকায় এটি ধুলো মেঘের ভেতর থেকে নক্ষত্রপুঞ্জকে দেখতে সক্ষম। সৃষ্টির সময় থেকে ব্রহ্মাণ্ডের আকার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এর ফলে মহাবিশ্বের আলোকবর্ষের দূরের ছায়াপথগুলোর রং লালের দিকে ঝুঁকছে। যা ইন্ফ্রায়েড টেলিস্কপে দেখা যাবে। পৃথিবী এবং সূর্যের তাপ থেকে টেলিস্কোপটিকে বাঁচতে টেনিস কোর্টের আকারের পাঁচটি পর্দা দিয়ে জেমসকে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। জেমসে রয়েছে ১৮ টি ষড়ভুজ আকারের আয়না। যাদের সম্বিলিত ব্যাস ৬.৫ মিটার। কক্ষপথে পৌঁছনোর পর ফুলের পাঁপড়ির মতো এই ১৮ টি আয়না এক সঙ্গে খুলে যায়। ওয়েব টেলিস্কোপ নির্মাণে যতগুলি চ্যালেঞ্জ-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে সবথেকে বেশি বেগ পেতে হয়েছিল এই আয়না নির্মাণে। এর আগের টেলিস্কোপগুলোতে ১ টি আয়না ছিল। জেমসের ‘পূর্বপুরুষ’ হাবল টেলিস্কোপের থেকে এই আয়না প্রায় ৬ গুন্ বেশি আলো সংগ্রহ করতে সক্ষম। জেমস টেলিস্কপের ১৮ টি শক্তিশালী আয়নাতেই অনেক দূরের নক্ষত্রপুঞ্জ-এর আলোর ঝলকানি ধরা দিয়েছে। যা নানারকম যান্ত্রিক প্রক্রিয়া পেরিয়ে নাসায় এসে পৌঁছেছে। 

১৩৭০ কোটি বছর আগে একেবারে প্রথম জন্ম নেওয়া তারাগুলোর আলোর বিচ্ছুরণ কীভাবে ঘটেছিল, বিগ ব্যাং থেকে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির সময়কালে আলোর বিচ্ছুরণই বা কীভাবে ঘটেছিল? দূরের গ্রহগুলোতে কোনও প্রাণের অস্তিত্ব কি রয়েছে? বা মানুষের বাসযোগ্য কোনও পরিবেশ? এই সমস্ত উত্তর পেতেই জেমস ওয়েস টেলিস্কোপকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, জেমস তার প্রথম উদ্দেশ্যে বেশ কিছুটা সফল হয়েছে। কে বলতে পারে অদূর ভবিষৎ-এ হয়তো ভিনগ্রহীদের সন্ধান দেবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।    

    

 

Comments are closed.