ইঞ্জেকশন নয়, নেজাল স্প্রে ভ্যাকসিন কোভিড প্রতিরোধে বেশি কার্যকর হতে পারে, নয়া দাবি চিন, আমেরিকা ও ব্রিটেনের গবেষকদের

‌করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে সারা বিশ্বেই নানা রকম চিন্তাভাবনা চলছে। দ্রুত কার্যকরী ভ্যাকসিন আনার জন্য বিভিন্ন দেশ গবেষণা করে চলেছে। কিন্তু কোন ধরনের ভ্যাকসিন বেশি কার্যকরী হবে? বিভিন্ন গবেষণায় দাবি, ইঞ্জেকশনের চেয়ে নেজাল ভ্যাকসিন বা নাকে স্প্রে করা হলে তা বেশি কার্যকরী ফলাফল দেবে। নেজাল স্প্রে দিলে তা সরাসরি নাক ও মুখে ক্রিয়া করবে এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অধিক কার্যকরী ফলাফল দেবে।
বিভিন্ন গবেষণায় দাবি, নেজাল ভ্যাকসিন ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাস, উভয় ক্ষেত্রেই দ্বৈত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবে। H1N1, H3N2-এর মতো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এই টিকা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে দাবি করেছেন কিছু বিশেষজ্ঞ।
মানব শরীরে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় টিকার কার্যকারিতার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুটি শট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতেও ডেভেলপাররা নিশ্চিত নন যে, এতে সম্পূর্ণভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ হবে। এই প্রেক্ষিতে ইঞ্জেকশন নয়, স্প্রে ও সেবনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা বলছে মার্কিন, ব্রিটেন ও চিনের গবেষকরা। বিজ্ঞানীরা ইনহেলড ভ্যাকসিনের সাহায্যে উচ্চতর প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির আশা করছেন। তাঁদের দাবি, নাকে স্প্রে কিংবা সেবনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দিলে তা ভাইরাসের প্রবেশপথের একেবারে গোড়াতেই আঘাত হানতে পারবে। ভালো ইমিউন রেসপন্সও পাওয়া যাবে।
যেমন ইউনিভার্সিটি অফ এলাবামা’র ইমিউনোলজিস্ট ফ্রান্সেস লান্ড জানাচ্ছেন, করোনার ক্ষেত্রে লোকাল ইমিউনিটি বিশেষ জরুরি। আর সে ক্ষেত্রে গতানুগতিক ভাবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে যে টিকা দেওয়া হয় তার চেয়ে ভালো ফল দিতে পারে নেজাল স্প্রে। দ্রুত আরোগ্যের জন্য ইঞ্জেকশনকেই টিকাদানের পরিচিত মাধ্যম হিসেবে বিশ্বাস করে এসেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। করোনার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এখন ইনহেলড ভ্যাকসিন তৈরি করছে। লাংস, নাক, গলা ও মিউকোসায় সরাসরি টিকা দেওয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তারা। এর ফলে এই টিস্যুতে থাকা igA নামক ইমিউন প্রোটিন টিকাদানের পর রেসপিরেটরি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী ফলাফল দিতে পারে দাবি করছেন তাঁরা।
শ্বাসযন্ত্রে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানতে পারে যে মারণ ভাইরাস তার হাত থাকে বাঁচতেও অধিক কার্যকরী হবে নেজাল স্প্রে-ই, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। যেমন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফেকশিয়াস ডিজিস স্পেশালিস্ট মাইকেল ডায়মন্ড বলেছেন, প্রথম জেনারেশনের ভ্যাকসিন যে প্রচুর মানুষকে রক্ষা করতে চলছে তা আশা করাই যায়। তবে আমি মনে করি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জেনারেশনের করোনা টিকার বেশিরভাগটাই হবে ইন্ট্রানেজাল ভ্যাকসিন। নাহলে গোষ্ঠী সংক্রমণ চলতেই থাকবে।
গত অগাস্ট মাসে ডায়মন্ডের নেতৃত্বাধীন একটা দল দেখেছে যে নাকের মাধ্যমে টিকা দিলে তার রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে নাক ও শ্বাসযন্ত্র যেখানে সবচেয়ে আগে আঘাত হানছে এই ভাইরাস তা থেকে প্রতিরোধ করতে পারে নেজাল স্প্রে।
নাকের মাধ্যমে করোনা টিকা দেওয়ার আরও বেশ কিছু প্রাথমিক সুবিধা রয়েছে। যেমন, এখানে সূচ ফোটানোর কোনও প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই ব্যথাহীনভাবে টিকাগ্রহণ করতে পারবেন মানুষ। কম তাপমাত্রায় ডোজ সংরক্ষণেরও দরকার পড়বে না। তবে অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতো এই নেজাল স্প্রে ভ্যাকসিন নিয়ে আরও গবেষণার জায়গা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

Comments are closed.