গন্ধবিচারে করোনা যাচাই – Anosmia কি করোনার উপসর্গ?

শুকনো কাশি আর প্রবল জ্বর, এই দুইকে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকেরা। এরই মধ্যে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, ইদানীং ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে। তাই ঘ্রাণশক্তি লোপ বা Anosmia কেও এখন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার আর এক উপসর্গ (symptom) হিসেবে দেখা হচ্ছে।

করোনা যেখান থেকে প্রথম ছড়িয়েছে, সেই চিন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ইত্যাদি দেশের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন হঠাৎ করে ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া‌ (Anosmia) হতে পারে কোভিড-১৯ এর অন্যতম লক্ষণ। ব্রিটেনের একদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, গন্ধ বিচার করতে না পারা আসলে করোনা সংক্রমণের পূর্বাভাস।

 

Anosmia in Corona Infection: করোনাভাইরাস কি রোগীর স্নায়ুতে প্রবেশ করতে পারে?

ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া প্রতিনিয়ত নাকের মধ্যে আঘাত করতে পারে। তবে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশিরভাগ প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। কয়েকটি প্যাথোজেন নাকের মধ্য দিয়ে দ্রুতবেগে প্রবেশ করে ঘ্রাণশক্তির জন্য দায়ী স্নায়ুকে জখম করতে পারে। এই ঘ্রাণশক্তির জন্য দায়ী স্নায়ু বা Olfactory nerve আমাদের গন্ধ পেতে সাহায্য করে। কিছু প্যাথোজেন আবার Trigeminial nerve, যার সাহায্যে আমরা চর্বণ ও কামড় দিতে পারি, সেই স্নায়ুকে আক্রমণ করে।

 

করোনা ছাড়া আর কোন ভাইরাস ঘ্রাণশক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে?

ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে হার্পস, এমন বেশ কিছু ভাইরাস আছে যা মানব শরীরের Olfactory nerve কে আক্রান্ত করতে পারে। কোভিড-১৯ বাদে mouse hepatitis ভাইরাস, সেটিও করোনাভাইরাস গোত্রীয়, আক্রান্তের শরীরের ঘ্রাণজ স্নায়ুকে বারবার আঘাত করার পর ব্রেনে হানা দেয়।

মানব শরীরের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একাধিক গোত্রের করোনাভাইরাস স্নায়ুকে আক্রান্ত করে শেষে আঘাত হানে মস্তিষ্কে। এখন SARS-CoV-2 বা COVID 19 Olfactory স্নায়ুকে আক্রান্ত করে কি না তা নিয়ে গবেষণা ও বিতর্ক চলছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তাই চিকিৎসক-মহল কিছুটা দো’টানায়। তবে কি সত্যিই Anosmia, another symptom of corona infection?

 

কীভাবে একটি সংক্রমণ ঘ্রাণশক্তিকে অবশ করে?

Anosmia in corona infection

 

Olfactory nerve কে চরম আঘাত করতে সক্ষম হলেই কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনে আমাদের ঘ্রাণ ক্ষমতা লোপ (Anosmia) পেতে পারে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যদি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ঘ্রাণজ স্নায়ু আক্রান্ত হয়, তাতেই মানুষের গন্ধ বিচারের ক্ষমতা চলে যায়।

যদি কারও ৩০ শতাংশ Olfactory nerve নষ্ট হয়ে যায়, স্বাভাবিক প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে গন্ধ পাওয়া যেত, তা চলে যায়। অবশ্য জোরে নাক টেনে কিছু শুঁকোতে চেষ্টা করলে গন্ধ বিচার করতে পারেন ওই মানুষটি।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে Olfactory nerve জখম হতে পারে। আর ভাইরাসের ক্ষেত্রে সেই প্রভাব আরও দ্রুত হয়।

 

শুধু গন্ধ নয়, স্বাদের উপরও হানা?

আমরা যাকে স্বাদ বা ইংরেজিতে taste বলে বর্ণনা করি তা আসলে গন্ধ ও আস্বাদনের সমাহার। যেমন, কোনও টেস্টি খাবার বলতে আমরা আসলে তার গন্ধ ও স্বাদ দুটো জিনিসকেই বোঝাই। তাই ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া হানায় যদি Olfactory nerve আক্রান্ত হয়, গন্ধ বিচারের ক্ষমতা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারও বিস্বাদ লাগবে আক্রান্তের। তাই Olfactory nerve আক্রান্ত হলে ঘ্রাণের পাশাপাশি খাবারের স্বাদও গ্রহণ করতে পারেন না রোগী।

 

কেন কিছু করোনা আক্রান্ত ঘ্রাণশক্তি হারাচ্ছেন?

আমাদের প্রত্যেকের শরীর ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভিন্ন। সেটা জিনগত কারণে হতে পারে, আবার পরিবেশের পার্থক্যের জন্যও হতে পারে। তাই সব আক্রান্তের একই symptoms of corona infection থাকে না। কিংবা সবার স্নায়ু একটি নির্দিষ্ট প্যাথোজেনের আঘাতে সমান প্রভাবিত হয় না।

এই ব্যাপারে ইঁদুরের উপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শুধুমাত্র আলাদা প্রজাতির উপরই নয়, ভিন্ন স্নায়ুকে আক্রান্ত করে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এ নিয়ে এখনই শেষ কথা বলতে রাজি নন তাঁরা।

 

ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া কি চিরকালীন?

প্যাথোজেনের আঘাতে ঘ্রাণজ স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে তার শক্তি হারালেও তা স্বল্পকালীন। শরীরে নতুন স্নায়ুকোষ তৈরি হলে আবার ঘ্রাণশক্তি ফিরে আসে। আক্রান্তের উপর প্রভাব কতটা জোর তার ভিত্তিতে এই ঘ্রাণশক্তি ফিরতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

Comments are closed.