চোখের ইনফেকশন বা কংজাংটিভাইটিস কি করোনার উপসর্গ? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসকদের মধ্যে

শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, প্রচণ্ড জ্বর, এমনকী ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়াকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। এবার চিকিৎসক মহলের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, কনজাংটিভাইটিস বা যাকে আমরা ‘চোখ ওঠা’ বা ‘জয় বাংলা’ বলে থাকি, সেই চোখের ইনফেকশনও কি করোনা আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ? কেন এমন মনে করছেন চিকিৎসকেরা?
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম aljazeera.com এ সম্প্রতি Doctor’s Note: Are eye infections a symptom of coronavirus? শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট আই অ্যাসোসিয়েটের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডঃ অ্যাশলে ক্যাটসিকোস।
এই প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কিছুদিন আগে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসির এক হাসাপাতালের চিকিৎসকরা সন্দেহ প্রকাশ করেন, হঠাৎ করে চোখে ইনফেকশন দেখা দিলে তা করোনার সংকেত হতে পারে।
২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস যখন ছড়িয়েছিল, তখনও গবেষণায় উঠে এসেছিল, চোখের মাধ্যমে তা সংক্রামিত হতে পারে। যদিও গবেষকরা এও জানাচ্ছেন, চোখের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা খুব কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাক ও মুখের মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস।

কনজাংটিভাইটিস কী?‌

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাসের আক্রমণে চোখে যে সংক্রমণ হয়, তাই হল সহজ কথায় কনজাংটিভাইটিস। চোখের এই রোগ আট থেকে ৮০ সব বয়সেই হতে পারে। বহুদিন ধরেই চোখের এই রোগ সম্পর্কে অবহিত সবাই। শুধু চোখ চুলকানো, চোখ থেকে জল পড়া কিংবা চোখ ফুলে লাল হয়ে যাওয়া নয়, এখন চোখের কর্নিয়ারও ক্ষতি হচ্ছে এই রোগে। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময় রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে, আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হচ্ছে, কিংবা চোখ দিয়ে রক্ত পড়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
যে ভাইরাসগুলির কারণে এই রোগ হয়, তার মধ্যে অন্যতম অ্যাডেনো ভাইরাস। গত তিন-চার বছরে এর প্রকোপে কনজাংটিভাইটিস হওয়ার ঘটনা অনেকাংশেই বেড়ে গিয়েছে। অ্যাডেনো ভাইরাস বা এ ধরনের অন্যান্য ভাইরাসের আক্রমণে কর্নিয়ায় ছোট ছোট সাবুর দানার মতো তৈরি হয়। যার ফলে দৃষ্টিশক্তি কম যায়, ‘ফটোফোবিয়া’, অর্থাৎ আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হয়, কিংবা চোখ থেকে রক্ত পড়ার মতো ঘটনা ঘটে।  কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় যাতে কোনওভাবে কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

কীভাবে এই সংক্রমণ হয়?

নানাভাবে কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। যাঁর এই সংক্রমণ হয়েছে তিনি চোখ কচলে সেই হাত দিয়ে দরজার হাতল ধরলেন। সেই হাতল ধরে অন্য কেউ চোখে হাত দিলে, তারও কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। বা বাড়িতে কারও হয়েছে। তিনি রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন। অন্য কেউ সেই রুমালটা ধরে পরে আনমনে নিজের চোখে হাত দিলেন। তার থেকেও ছড়াতে পারে।
ঠান্ডা লাগা, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকেও কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যেমন কোভিড-১৯ ছড়াচ্ছে, চোখের মাধ্যমেও তা ছড়াতে পারে।

করোনার সময়ে কতটা ভয়ের কনজাংটিভাইটিস এর লক্ষণ?

চিকিৎসকেরা অবশ্য বলছেন, এখনও পর্যন্ত খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষের কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণের মাধ্যমে করোনা ধরা পড়েছে। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশের মধ্যে কনজাংটিভাইটিস দেখা গিয়েছে। তবে কনজাংটিভাইটিসের সঙ্গে জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

কনজাংটিভাইটিস হলে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন এবং কেমন করে সংক্রমণ রোধ করতে পারেন?

করোনা এড়াতে যেমন বারবার হাত ধোওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, এক্ষেত্রেও সেটাই করতে বলছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে যদি বাজার, অফিস বা বাইরে থেকে ফেরেন, মুখ, নাকের পাশাপাশি চোখেও হাত দেওয়া এড়াবেন। ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।
বাতাসেও ছড়াতে পারে কনজাংটিভাইটিস। তাই হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকুন। আর বাড়িতে থাকলে পরিবারের অন্যান্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত আক্রান্তের। অন্যের আই ড্রপ, কনট্যাক্ট লেন্স, কসমেটিক্স ব্যবহার না করার মাধ্যমে সংক্রমণ রোধ করা যায়।
বালিশের কভার, তোয়ালে সর্বদা পরিষ্কার রাখুন। করোনা ঠেকাতে বাইরে বেরলে মাস্কের সঙ্গে এখন চোখের প্রোটেকশন নিয়ে সানগ্লাস, হাতে গ্লাভস ব্যবহারেরও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

Comments are closed.