সাংবাদিকতা করার আগে আইন জানুন, সুনন্দা পুষ্কর মামলায় সমান্তরাল তদন্ত চালানো নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের ভর্ৎসনা অর্ণব গোস্বামীকে

ফৌজদারি মামলা প্রক্রিয়া সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা ছাড়াই সাংবাদিকতা করছেন? কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের মৃত্যুর ঘটনায় সমান্তরাল তদন্ত চালানোর অভিযোগে দায়ের মামলায় রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে বললো দিল্লি হাইকোর্ট। সাফ জানিয়ে দিল, যখন পুলিশি তদন্ত চলছে, তখন সংবাদমাধ্যমে সমান্তরাল তদন্ত চালিয়ে কাউকে দোষী ঘোষণা করা বেআইনি। পাশাপাশি কোনও বিষয় নিয়ে খবর দেখানোর সময় অপ্রয়োজনীয় বাগাড়ম্বর এবং উত্তেজক শব্দবন্ধ ব্যবহার করতেও নিষেধ করেছে আদালত।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের অভিযোগ ছিল রিপাবলিক টিভি চ্যানেলে এই বিষয়ে গত জুলাই ও অগাস্ট মাসে সম্প্রচারিত কয়েকটি অনুষ্ঠান, যেখানে অ্যাঙ্কর অর্ণব গোস্বামী দাবি করেছিলেন, তাঁর চ্যানেলের সাংবাদিকরা সুনন্দ পুষ্কর মামলা তদন্তকারী সংস্থা বা পুলিশের চেয়েও ভালো তদন্ত করেছেন। এবং সেই সূত্রেই তাঁদের দাবি ছিল, সুনন্দ পুষ্করকে খুন করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্ট এ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ফৌজদারি মামলার শুনানি প্রক্রিয়া যখন চলছে, তখন সাংবাদিকের এই দাবি কীসের ইঙ্গিত? যাঁরা এই ধরনের সমান্তরাল তদন্তের কাজ চালাচ্ছেন, তাঁদের ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জ্ঞান কতটুকু? ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের বিচারপতি মুক্তা গুপ্তা বলেন, সমান্তরাল তদন্ত চালানোর প্রতিফলন থারুরের উপর নয় বরং তদন্তকারী সংস্থার উপরই প্রশ্নচিহ্নের সামিল। আদালত নিজের পথে চলুক, এটা কি সংবাদমাধ্যমের কাম্য নয়?

তারপরই বিচারপতি গুপ্তা বলেন, সাংবাদিকতায় আসার আগে প্রত্যেকের ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বিশদে জানা উচিত। তিনি বলেন, দয়া করে সংযম দেখান। যখন পুলিশ তদন্ত করছে, তখন সংবাদমাধ্যম সমান্তরাল বিচার প্রক্রিয়া চালাতে পারে না। এই প্রসঙ্গেই আদালত ২০১৭ সালের পয়লা ডিসেম্বরের একটি জাজমেন্টের প্রসঙ্গ তোলে। যে রায়ে সাফ বলা হয়েছিল, সংবাদমাধ্যম কাউকে অপরাধী ঘোষণা করতে পারে না।

পাশাপাশি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুক্তা গুপ্তা এও জানিয়েছেন যে তাঁদের উদ্দেশ্য সংবাদমাধ্যমকে স্তব্ধ করা নয়। বরং তদন্তের পবিত্রতা রক্ষা করা। এই সময় সংবাদমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

এদিকে টিভি নিউজ নিয়ে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ এসেছে বম্বে হাইকোর্ট থেকে। বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় বৃহস্পতিবার বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও জি এস কুলকার্নির বেঞ্চ বলে, আমরা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার উপর রাষ্ট্রের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই! সম্প্রচারিত খবরের বিশেষ তাৎপর্যের প্রেক্ষিতে কেন রাষ্ট্র টিভি নিউজকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনবে না? এ বিষয়ে দু সপ্তাহের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে জবাব তলব করেছে বেঞ্চ।

Comments are closed.