অযোধ্যা মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট

নিজেদের পুরনো অবস্থানে অনড় থাকল সুপ্রিম কোর্ট। অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দ্রুত শুনানির দাবি খারিজ করে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানাল, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই অযোধ্যা মামলার শুনানির দিন ঠিক হবে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে, অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমিকে রাম লালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখাড়ার মধ্যে সমান তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধুলিসাৎ হওয়ার আগে থেকেই প্রতিটি নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু হয়ে ওঠে রাম মন্দির–বাবরি মসজিদ মামলা। বিজেপির প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারে অযোধ্যায় রাম মন্দির স্থাপনের বিষয়টি যেমন প্রতিশ্রুতি হিসেবে সামনে রেখেছে, তেমনই বিজেপি বিরোধী দলগুলো দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার কথা বলে বিরোধিতা করে এসেছে। ২০১৯ সালে দেশের লোকসভা নির্বাচন। সেই কারণেই এই মামলার গুরুত্ব বেড়ে গেছে।
১৮৫৩ সালে অযোধ্যায় প্রথম হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে রাম মন্দির ইস্যুতে সংঘর্ষ বাঁধে। যার জেরে ব্রিটিশ সরকার মসজিদকে বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়। যাতে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় রীতি মেনে পুজো করতে পারে। এরপর ১৯৪৯ সালে একটি ঘটনার পর অযোধ্যাকে বিতর্কিত জায়গা বলে উল্লেখ করে মসজিদের দরজা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় তত্‍কালীন কেন্দ্রীয় সরকার। পরবর্তীতে নানা সময়ে মন্দির ও মসজিদের অধিকারের দাবি জানিয়ে একাধিক হিন্দু ও মুসলিম সংগঠন আদালতের কড়া নাড়ে। ১৯৬১ সালে এক পিটিশন দায়ের করে উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। ১৯৮০ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাবরি মসজিদের জমিতে রাম মন্দির গড়ে তোলার জিগির তোলে। সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানায় বিজেপি। ১৯৯০ সালে বিজেপি সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদবানি রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে গুজরাত থেকে উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত রথ যাত্রার আয়োজন করেন।
১৯৯২ সালে ৬ই ডিসেম্বর রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধ্বংস করা হয় মসজিদ। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের খবরে উত্তাল হয় দেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও নতুন করে মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাম মন্দির বিতর্কে ইতি টানার চেষ্টা করেন। সেই বছরই এলাহাবাদ হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ পেয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বিতর্কিত জমিতে খনন শুরু করে। তার রিপোর্টও আদালতে জমা করে তারা। সেই রিপোর্টে তারা জানান, বিতর্কিত জমিতে একটা সময় রাম মন্দির ছিল খননের পর সেই সংক্রান্ত প্রমাণ মিলেছে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমিকে তিনটি অংশে ভাগ করা হবে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে আদালতের বাইরে অযোধ্যা মামলার নিষ্পতি করতে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেন আর্ট অফ লিভিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা রবি শঙ্কর।

Comments are closed.