সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি উদ্বোধন নিয়েও মোদী-রাহুল তরজা। কংগ্রেসকে খোঁচা মোদীর, পালটা বিজেপির সমালোচনায় রাহুল  

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩ তম জন্ম দিবসে বুধবার তাঁর স্মৃতিতে নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্ট্যাচু, ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধনের মঞ্চ থেকেই বিরোধীদের এক হাত নিয়েছেন মোদী। অন্যদিকে, প্যাটেলকে কংগ্রেসের লোক বলে উল্লেখ করে পালটা মোদীর বিরুদ্ধেই বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
গুজরাতের কেভাডিয়ায় এদিন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার (প্রায় ৬০০ ফুট)  উচু মূর্তির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্ট্যাচুটি নির্মিত হয়েছে গুজরাতের সর্দার সরোবোর বাঁধ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে নর্মদা নদীর তীরে। উচ্চতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দিক দিয়ে নজর কেড়েছে এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি। ৭ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যাবে এই মূর্তি। প্রতি ঘন্টায় ২২০ কিমি বাতাসের গতি ও ৬.৫ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প সামলে সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে এই স্ট্যাচু। ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। স্ট্যাচুটির ডিজাইন করেছেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত স্থপতি রাম ভি সূতর। দেশের ২৮ টি রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার গ্রামের কৃষকদের থেকে সংগৃহিত লোহার টুকরো, মাটি এই মূর্তি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে বলে গুজরাত সরকারের দাবি।
তবে এই মূর্তি উদ্বোধনকে ঘিরেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি কেন্দ্রের। এলাকার প্রায় ৭৫ হাজার আদিবাসী পরিবারের বাসস্থান, জীবিকা এই প্রকল্পের ফলে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় আদিবাসীদের। প্রকল্পের বিরোধিতায় স্থানীয় ২২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান চিঠিও লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। কিছু দিন আগে এই মূর্তি উন্মোচনের প্রচার সম্বলিত পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছিল আশপাশের এলাকায়। পরিস্থিতে সামলাতে পোস্টার পিছু দু’জন পুলিশ কর্মী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত প্রশাসন। বিরোধীদের অনেকে এই প্রকল্পকে, মেড ইন চায়না বলেও কটাক্ষ করছেন। কারণ, এই স্ট্যাচু নির্মাণে চিন থেকে প্রায় ৩০০ জন ইঞ্জিনিয়ারকে আনা হয়েছিল। বিরোধীদের আরও কটাক্ষ, যে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করেছিলেন সর্দার প্যাটেল, যারা দেশজুড়ে বিভেদের রাজনীতি করতে চাইছে তারাই সর্দার স্মরণে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বানিয়ে ভোটের আগে মানুষকে ধোঁকা দিতে চাইছে। এদিন রাহুল গান্ধী ট্যুইটে বলেছেন, দুঃখের বিষয় হল, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি উদ্বোধন করা হচ্ছে, কিন্তু তিনি দেশের যে সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন, আজ সেগুলোই ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।
এদিন মূর্তি উদ্বোধনের পর সমালোচকদের পালটা জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, অবাক লাগছে দেখে এই উদ্যোগেরও সমালোচনা করা হচ্ছে। এমন বলা হচ্ছে যেন সরকার কোনও অপরাধ করেছে! তাঁর প্রশ্ন, দেশের এই মহান ব্যক্তিকে স্মরণ করা কি ভুল? এদিন তিনি বলেন, দেশকে জোটবদ্ধ করার কাজ যদি সর্দার প্যাটেল না করতেন তাহলে গুজরাতের গির অরণ্য দেখতে যেতে, হায়দরাবাদের চারমিনার দেখতে যেতে দেশের মানুষের ভিসা লাগতো। রাহুল গান্ধীকে কটক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, গুজরাতের পরেশনাথের মন্দিরে যেতে হলেও ভিসা লাগত শিব ভক্তদের। উল্লেখ্য, নিজেকে শিবভক্ত বলে দাবি করে পরেশনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে গুজরাতে ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন রাহুল।

Comments are closed.