বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ রাজ্যের, বিভিন্ন জেলায় বসানো হবে লাইটনিং সেন্সর ডিভাইস

বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় বসানো হচ্ছে সেন্সর ডিভাইস। বজ্রপাতের কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে রাজ্যের সর্বত্র সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়াই হবে এই প্রযুক্তির কাজ, জানাল নবান্ন।

চলতি বর্ষার মরসুমে সারা দেশে বাজ  পড়ে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুদিন আগেই বিহারে পরপর বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০০ জনের। এ রাজ্যেও বজ্রপাতে প্রাণহানি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ১০টি রাজ্যের তালিকা তৈরি করেছে ক্লাইমেট রিসিলিয়েন্ট অবজারভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিল। তাতে তিন নম্বরে রয়েছে বাংলা। কাউন্সিলের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের জন্য চিহ্নিত। ২০১৯ সালে এই চার মাসের মধ্যে বাংলায় ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬০৮ টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তাতে মারা যান ৫২ জন। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ওড়িশা। গত বছর সংশ্লিষ্ট সময়ে ওড়িশায় বাজ পড়ার ঘটনা ঘটেছিল ৯ লক্ষ ২৯৬টি। মৃত্যু হয় একশোর বেশি মানুষের। চলতি বছরেও বজ্রাঘাতে পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চল্লিশে। যার বেশিরভাগই বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম জেলায়। খোলা মাঠে বা খেতে কাজ করার সময়ই এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে রাজ্যবাসীকে। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিল মমতা ব্যানার্জির সরকার।

আগামী এক বছরের মধ্যে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে চাইছে নবান্ন, যাতে বজ্রপাতের এক ঘণ্টা আগে মানুষের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়। সূত্রের খবর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই খড়্গপুর আইআইটির সঙ্গে আলোচনা করছে নবান্ন।

বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান জানান, বজ্রপাত নিয়ে আগাম সতর্কবার্তা জারি করে প্রাণহানির সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় লাইটনিং সেন্সর ডিভাইস বসানো হবে। এক একটি ডিভাইস ২৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার এলাকার জন্য আগাম সতর্কবার্তা জারি করতে পারবে। কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে জারি হবে সেই বার্তা। তাতে মাঠেঘাটে কাজ করা শ্রমিক ও কৃষকরা সাবধান হতে পারবেন, চলে যেতে পারবেন নিরাপদ আশ্রয়ে। জাভেদ আহমেদ খানের দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আগামী সপ্তাহে এই বিষয় নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক হবে। তাতে উপস্থিত থাকবেন কৃষি দফতরের আধিকারিকরাও।

প্রসঙ্গত, দেড় বছর আগে এক মার্কিন সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাজ্যের আটটি জায়গায় লাইটনিং সেন্সর ডিভাইস বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি থেকে আগাম সতর্কবার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য খুব কম সময় পাওয়া যাচ্ছিল বলে নবান্ন সূত্রে খবর। তাই এবার আরও আধুনিক সেন্সর ডিভাইস বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রক্রিয়াই শুরু দ্রুত শুরু হচ্ছে।

 

Comments are closed.