কেরলের স্নাতক স্তরে প্রথম বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকের মেয়ে পায়েল, হতে চান আর্কিওলজিস্ট

পায়েলের তখন মাত্র ৪ বছর। মা-বাবা বিহারের গ্রাম ছেড়ে পাকাপাকিভাবে চলে এসেছিলেন কেরলের এর্নাকুলাম। তারপর থেকে কোচির ছোট্ট এক চিলতে ভাড়া বাড়িতেই থাকছেন প্রমোদ কুমার ও বিন্দু দেবী। সঙ্গে তাঁদের ৩ সন্তান, ছেলে আকাশ ও দুই মেয়ে পায়েল, পল্লবী।

১৭ বছর আগে, প্রমোদ কুমার-বিন্দু দেবী যখন বিহার ছেড়ে কেরল আসেন, তখনও পরিযায়ী শ্রমিক শব্দবন্ধ বারোয়ারি ব্যবহারের তালিকায় ঢোকেনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের অন্যতম ক্ষেত্র হতে কেরলের তখনও ঢের দেরি। কিন্তু বিহার ছেড়ে প্রমোদ-বিন্দু কেরল পাড়ি দিয়েছিলেন, তার কারণ একটাই। সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর বাবা-মায়ের চিরন্তন স্বপ্ন। আজ পরিযায়ী শ্রমিক প্রমোদ-বিন্দুর মেয়ে পায়েল বিএ পরীক্ষায় কেরলে প্রথম স্থান অধিকার করে মা-বাবার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার পথে।

অভাবের তাড়নায় নিজে ক্লাস ৮ পর্যন্ত পড়েই শ্রমিকের কাজে ঢুকতে হয়েছিল প্রমোদ কুমারকে। সেই যন্ত্রণা ভুলতে পারেননি এই প্রবাসী শ্রমিক। স্বামী-স্ত্রী মিলে পণ করেছিলেন, নিজেদের সর্বস্য দিয়ে সন্তানদের পড়াবেন। তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড় করাবেন। যাতে অভাব ঘোচে। আর্কিওলজি নিয়ে স্নাতক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম হয়ে মা-বাবার সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিলেন মেয়ে পায়েল।

দশমে ৮৫ শতাংশ, দ্বাদশে ৯৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া পায়েল পড়াশোনায় ছোট থেকেই তুখোড়। ভাড়ার ছোট্ট বাড়িতে সবাই মিলে থাকি। বাবা রঙের দোকানের সামান্য কর্মচারী, সংসারে টাকা পয়সার নিত্য অনটন। মা-বাবা নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়াতেন। আজ তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এই দিনটার জন্যই তো এত বছরের অপেক্ষা। বলছেন কেরলে স্নাতকে প্রথম হওয়া পায়েল।

পায়েলের পড়ার ইতিবৃত্ত অবশ্য সমস্যাসঙ্কুল। একবার বাড়ির অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে পড়া ছাড়ার উপক্রম। কিন্তু ছাড়তে পারিনি আমার কলেজের জন্য। আমি কলেজ ছেড়ে দিতে পারি, একথা জানাজানি হতেই গোটা কলেজ আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। বিনোদ স্যার, বিপিন স্যার আর কলেজের বাকি পড়ুয়ারা আমায় প্রায় তুলে নিয়ে গিয়ে ক্লাসে বসিয়েছিলেন। এই কলেজ আমার কাছে মায়ের মতো। আনন্দের অশ্রু ঝরে পড়ে পায়েলের দু’গাল বেয়ে।

পায়েল ভাই-বোনেরাও কৃতী। ভাই সদ্য পাশ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় যোগ দিয়েছে আর বোন পল্লবী কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পায়েল বলছেন, ছেলেবেলা থেকেই ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ নিয়ে আগ্রহ। তাই স্নাতকস্তরে আর্কিওলজি নেওয়া। এবার আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে আর্কিওলজি নিয়ে পড়তে চাই। কাজ করতে চাই বিহারে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক নমুনা নিয়ে। মা-বাবা যদিও চাইছেন সিভিল সার্ভিস দিয়ে চাকরি করি। দেখা যাক কোন দিকে যাই… বলেন কৃতী পড়ুয়া।

Comments are closed.