হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে পরাজয়ের পর বাংলায় বিজেপির ক্ষমতা বিস্তার যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে হচ্ছে

প্রায় বিরোধী শক্তি শূন্য এরাজ্যে বিজেপির কাছে শেষ দু’বছর ধরে সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু তা সেভাবে লাগাতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। এখন তিন হিন্দি বলয়ে বিজেপির অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পর এরাজ্যে নিজেদের ক্ষমতা বিস্তার আরও কঠিন হল বলেই মনে হচ্ছে।
মোট তিনবার পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ভিত মজবুত করার সুযোগ পেয়েছিল বিজেপি। যদিও দু’বারই তারা দাগ ফেলতে পারেনি এরাজ্যের রাজনীতিতে।
৯০-এর প্রথম দিকে, বিজেপি যখন রাম মন্দিরের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, সেই আঁচ পড়েছিল বাঙালি রাজনৈতিক চেতনাতেও। দ্বিতীয়বার, অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বাঙলার একটা শ্রেণীর মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল বিজেপি। আর তৃতীয়বার ২০১৪ সালের পরবর্তী সময়, যখন গোটা দেশ মোদী ম্যাজিকে মুগ্ধ।
স্পাইডার ম্যান সিরিজে এক বিখ্যাত উক্তি সর্বজনবিদিত, ‘উইথ পাওয়ার কামস রেসপন্সিবিলিটি,’ অর্থাৎ কী না, ক্ষমতার সঙ্গে আসে দায়িত্ববোধ। বিজেপির ক্ষেত্রে, এই দায়িত্ববোধ দেখা গিয়েছে নিজেদের পার্টির আদর্শ ও চিন্তাধারায়। বিজেপির হিন্দত্ববাদ একটা বিশাল শ্রেণীর মানুষকে তাদের প্রতি আস্থাশীল করে।
একটা দল যখন ক্ষমতায় আসে স্বাভাবিকভাবেই তার নেতা ও কর্মী সংখ্যা বাড়ে। বিজেপির ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। যারা এক সময় বিজেপির সমালোচনা করতেন, তাদের অতি হিন্দুত্ববাদের প্রবল বিরোধিতা করতেন, অত্যাশ্চার্যভাবে তাঁরাই দলে দলে নাম লেখাতে লাগলেন বিজেপিতে।
কিন্তু ছবিটা পশ্চিমবঙ্গে ছিল ভিন্ন। ২০১৭ সালের আগে পর্যন্ত বিজেপিতে সেভাবে অন্য দলের নেতারা নিজের দল ছেড়ে যাননি। আর বিজেপি নেতৃত্ব আশ্চর্যজনকভাবে এই নতুন নেতাদের দলের উচ্চস্তরের নেতার জায়গা দিয়ে দেন সময় না নিয়ে। আর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক  ভুল ছিল। দলের মধ্যেও একটা বিভেদরেখা টেনেছে ওপর মহলের এই সিদ্ধান্ত। উপরন্তু বিজেপি তৃণমূল স্তরে গিয়ে রাজনীতি করতে অসমর্থ হয়েছে।
তা তাদের লালাবাজার ঘেরাও আন্দোলন থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। একাধিক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিজেপি শাসক বিরোধী বড় কোনও আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোটের লক্ষ্যে নামছে। কিন্তু উপনির্বাচন, পঞ্চায়েত ভোট ইত্যাদির ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে কলকাতার উত্তর, দার্জিলিং, মেদিনীপুর ছাড়া আর কোথাও তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না বিজেপি।
অন্য দুই বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএম সম্পর্কেও একই কথা খাটে। তা সে প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি সোমেন মিত্রর রানি রাসমণি রোডের সভা হোক বা সিপিএমের সিঙ্গুর থেকে কৃষক আন্দোলন হোক।
তবে অতি হিন্দুত্ববাদী বাঙালি যারা আজকাল মমতার বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ করেন তাঁরাই এরাজ্যে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Comments are closed.