স্কুল পরিচালনার পর ত্রিপুরার স্কুলে নিরামিষ মিড ডে মিল দেবে ইসকন, প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি মানিক সরকারের

সম্প্রতি ত্রিপুরার ২০ টি সরকারি স্কুলকে ইসকনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এবার আরও একধাপ এগিয়ে বহু সরকারি স্কুলে মিড ডে মিল সরবরাহের দায়িত্বও একই প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিপ্লব দেবের নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেধেছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের এই জোড়া সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। সিদ্ধান্ত বদলের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের।
২০ শে জুন ত্রিপুরা মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, রাজ্যের ২০ টি সরকারি স্কুলের পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ইসকনের হাতে। সেই সময় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা হয়। কিন্তু ত্রিপুরার বিজেপি সরকার পিছু হঠেনি। এবার কার্যত আরও একধাপ এগিয়ে রাজ্যের একাধিক স্কুলের মিড ডে মিল সরবরাহের দায়িত্বও তারা তুলে দিতে চলেছে ইসকনের হাতে। রথ যাত্রার দিন সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। তিনি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু স্কুলে মিড ডে মিল সরবরাহের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে ইসকনের হাতে। পরীক্ষা সফল হলে বাড়ানো হবে স্কুলের সংখ্যা। রতনলাল নাথ আরও জানান, এই স্কুলগুলোতে ইসকন পড়ুয়াদের নিরামিষ খাবার পরিবেশন করবে।
এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন তুলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। চিঠিতে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, সরকারি স্কুল বেসরকারি পরিচালনায় ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা এর আগে রাজ্যে ঘটেনি। সরকারি স্কুলের পরিচালন বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বাড়ির পড়ুয়ারা বিপদের মুখে পড়বেন। কারণ বেসরকারি সংস্থা কেবলমাত্র সেবার মনোভাব নিয়ে সরকারি প্রকল্পের দেখভাল করছে, এমনটা কার্যত অবাস্তব। এর ফলে সকলের জন্য শিক্ষা মিশন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বহু বছর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো মানিক সরকার। পাশাপাশি, রাজ্যের মিড ডে মিল সরবরাহের দায়িত্ব সরকার ছেড়ে দিলে, সেই জায়গায় বেসরকারি সংস্থার কাছে লাভ করাই মুখ্য হয়ে উঠবে বলেও গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর দাবি, মিড ডে মিল সরবরাহ বেসরকারি হাতে চলে গেলে তার প্রভাব পড়বে স্থানীয় বাজারের উপর, ডিম কিংবা সবুজ তরি-তরকারি সরবরাহকারীদের বাজারও ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসবে। পাশাপাশি, পড়ুয়ারাও তাদের পছন্দের খাবার থেকে বঞ্চিত হবে। এই পরিস্থিতিতে সব দিক বিবেচনা করে সরকার যেন সরকারি স্কুল এবং মিড ডে মিল বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে পাঠানো চিঠিতে আর্জি বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের।
এর আগে সরকারি স্কুল ইসকনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় গৈরিক ছাপ আনতেই বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্ত। এবার মিড ডে মিলে ইসকন কর্তৃক নিরামিষ খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও একই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজ্যের শিক্ষামহলের একাংশ। দেশের একটি রাজ্যে সম্প্রতি মিড ডে মিলে ডিম বন্ধ করার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। ত্রিপুরাতেও এবার মিড ডে মিলে ডিম বন্ধ করে নিরামিষ খাওয়ার ব্যবস্থা প্রচলন করতে চাইছে বিজেপি সরকার। মানিক সরকারের প্রশ্ন, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বাড়ির পড়ুয়াদের দেহে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ঢুকবে কী করে? আর একটি অংশের দাবি, স্কুল পরিচালনা ইসকনের হাতে তুলে দেওয়া এবং মিড ডে মিল ধর্মীয় সংগঠনের হাতে দিয়ে, ঘুরিয়ে নিরামিষ খাবারের প্রচলন, আসলে বিজেপির রাজনীতিরই দোসর।

Comments are closed.