বীরসা মুন্ডা ভেবে কার মূর্তিতে মালা দিলেন অমিত শাহ, কটাক্ষ তৃণমূলের! অস্বস্তিতে বিজেপি

কথা ছিল বীরসা মুন্ডার মূর্তিতে মাল্যদান করে বাঁকুড়া সফর শুরু করবেন অমিত শাহ। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার পুয়াবাগানে যে মূর্তিকে ভগবান বীরসা মুন্ডার বলে মালা দিয়েছেন অমিত শাহ তা আসলে এক অজ্ঞাত আদিবাসী শিকারীর মূর্তি। পরে ভুল বুঝতে পেরে বীরসার একটি ছবি এনে মূর্তির নীচে রাখা হয়। শা তাতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপির দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিতে দেরি করেনি তৃণমূল।

গত লোকসভা ভোটে আদিবাসীদের ঢালাও সমর্থন পেয়েছে গেরুয়া শিবির। বিধানসভা ভোটের আগে সেই ভোট ব্যাঙ্ককে আরও সুসংহত করতে জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া আসেন অমিত শাহ। এক আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে দুপুরের খাবার খান তিনি। কিন্তু সমস্যা শুরু সকালে।

বিজেপির পোস্টারের ছবি

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ বাঁকুড়া শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পুয়াবাগানে ৬০ এ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ভগবান বীরসা মুন্ডার নাম করে একটি মূর্তিতে মাল্যদান করেন অমিত শাহ। কিন্তু পরে জানা যায়, মূর্তিটি আদৌ বীরসার নয়, এলাকারই কোনও অজ্ঞাত পরিচয় শিকারীর। স্থানীয় আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মাহালের নেতা সানগিরি হেমব্রম আপত্তি জানিয়ে বিজেপির স্থানীয় সাংসদ সুভাষ সরকারকে ফোন করেন। নিজেদের ভুল বুঝতে পারে গেরুয়া শিবির। তড়িঘড়ি বীরসার একটি ছবি এনে রাখা হয় মূর্তির পদতলে। মাল্যদান করেন অমিত শাহ।

এই ঘটনা নতুন করে তৃণমূলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। বিজেপিকে বরাবরই বহিরাগত বলে কটাক্ষ করে রাজ্যের শাসক দল। এবার বীরসা মুন্ডা মনে করে অজ্ঞাত পরিচয় আদিবাসী শিকারীর ছবিতে মালা দেওয়ার ঘটনা আমাদের সেই দাবিতেই সিলমোহর দিল, বলছেন তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলার প্রধান শ্যামল সাঁতরা। তিনি বলছেন, বিদ্যাসাগর থেকে বীরসা মুন্ডা, বিজেপি কাউকেই চেনে না। বাংলা তথা বাংলার আদিবাসী সংস্কৃতি সম্বন্ধে কোনও ধারণা নেই অমিত শাহদের। এভাবে বাংলা দখলের স্বপ্ন দু:স্বপ্নে পরিণত হতে সময় লাগবে না। অমিত শাহ কি বাংলাকে কখনও সম্মান করবেন না? এই প্রশ্ন তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে তৃণমূল। #BengalAsksAmitShah ট্রেন্ড করছে ট্যুইটারে।

ট্যুইট টিএমসি

একই সুরে বিজেপিকে বিঁধছেন আদিবাসী নেতৃত্বও। তাঁরা বলছেন, এখান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বীরসা বাজারে বীরসা মুন্ডার মূর্তি আছে। বিজেপি মাল্যদানের অনুষ্ঠান সেখানে করতে পারত। কিন্তু তা না করে জাতীয় সড়কের সৌন্দর্যায়নে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যে আদিবাসী শিকারীর মূর্তি বসিয়েছিল, তাকে বীরসা মুন্ডা বলে ধরে নিয়ে অনুষ্ঠান হয়ে গেল! এভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়কে অপমান না করলেই হোত, মনে করছেন আদিবাসী নেতাদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পরও তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে দ্বিধায় বিজেপি! বীরসা মুন্ডার ছবি সংসদের গ্যালারিতে শোভা পায়। আদিবাসী নেতৃত্বের আর্জি, রাজ্যের ১৮ জন সাংসদকে নিয়ে অমিত শাহ সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চান।

গোটা ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। বাঁকুড়ার বিজেপি সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলছেন, মূর্তির তলায় নাম না থাকায় আমাদের বুঝতে ভুল হয়েছে। এতে অমিত শাহের কোনও দোষ নেই, আমাদের ভুলেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, মানছে গেরুয়া শিবির।

Comments are closed.