গত ১২ মাসের মধ্যে ১১ মাসেই গাড়ি বিক্রি কমেছে গোটা দেশে, জুন মাসে কমল ২৫ শতাংশ, গাড়ি উৎপাদন বন্ধ বহু সংস্থায়

দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ঘোষণা করেছিলেন, ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে এগোচ্ছে ভারত। দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটের লক্ষ্য আরও ভালো লগ্নি, আরও বেশি কর্মসংস্থান ও সার্বিক উন্নতি। কিন্তু এই বাজেট পেশের ক’দিন বাদেই দেশের গাড়ি শিল্পের ভয়াবহ চিত্র অন্য কথা বলছে।
গত এক বছরে একমাত্র ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস বাদে, ১২ মাসের মধ্যে ১১ মাসই দুই ও চার চাকা গাড়ি বিক্রির হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গিয়েছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে গাড়ি বিক্রির হার কমেছে ১৭.৫৪ শতাংশ।
সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারারস (এসআইএএম) এর সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত জুন মাসে চার চাকা গাড়ি বিক্রি কমেছে ২৪.৯৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল বিক্রির হারও তথৈবচ। গত এক মাসে ১১.৬৯ শতাংশ হারে দু’ চাকার মোটরসাইকেলের বিক্রি কমেছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান আর্থিক বছরের শুরুতেই ব্যাপক ধাক্কা পড়েছে গাড়ি শিল্পে। গত ১৮ বছরের মধ্যে এই প্রথম গাড়ি শিল্প এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
কিছুদিন আগেই এক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছিল, গোটা দেশে অবিক্রিত অবস্থায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার গাড়ির ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নীচে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতির বহর কমাতে উৎপাদন সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সবকটি অটোমোবাইল সংস্থা। এদিকে উৎপাদন স্থগিতে চাপ বাড়ছে ডিলার ও গাড়ির শোরুম মালিকদের ওপর। শোরুমে বাড়ছে গাড়ির পাহাড়, ক্রেতা নেই, কিন্তু বিশাল অঙ্কের জিএসটি দিতে হচ্ছে সরকারকে।
সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশ, গত বছরের জুলাই মাস থেকে ভারতে গাড়ি ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। বড় বা ছোট শহরগুলিতে নতুন গাড়ি কেনার হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গিয়েছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন, দেশের বর্তমান কর্মসংস্থানের অভাব ও সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে। মূলত এই দুই কারণে দেশে নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে না বলে অভিমত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
এসআইএএম-এর সভাপতি রাজন ওয়াধেরা জানান, দেশে গাড়ি শিল্পে এমন মন্দা এর আগে আসেনি। আস্তে আস্তে অবস্থার উন্নতির আশা করলেও, ক্রমশ তা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাজন ওয়াধেরা। কেন্দ্র বৈদ্যুতিক গাড়িতে জিএসটি কমানোর কথা ঘোষণা করলেও, আইসি ইঞ্জিন গাড়িতে কর সেই উঁচুতেই রয়েছে। গাড়ি শিল্পের সার্বিক মন্দা কাটানোর কোনও দিশা দিতে পারেনি মোদী সরকারের ২০১৯ এর বাজেট। পাশাপাশি, জ্বালানি তেলের দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘোর বিপর্যয়ের মুখে দেশের গাড়ি শিল্প। ইতিমধ্যে অনেক ডিলারই গাড়ি ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। গাড়ি শিল্পে কর্মরতদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। এই অবস্থায় দ্রুত সঞ্জীবনীর আশায় প্রহর গুনছে দেশের মোটর গাড়ি নির্মাণ সংস্থাগুলি।

Comments are closed.