সিবিআই এখন বিজেপি ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনঃ মমতা, রাফাল তদন্ত ঠেকাতেই সরানো হল সিবিআই প্রধানকেঃ ইয়েচুরি

সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই উত্তাল দেশের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক মহল। মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গুজরাত ক্যাডারের অফিসার এবং সিবিআই-এর স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে দুর্নীতির তদন্তের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই কি কেন্দ্র মঙ্গলবার মাঝরাতে এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল, এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এদিন সকাল থেকেই সরব হয়েছে সবকটি রাজনৈতিক দল। সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস একযোগে সরব হয়েছে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে এই ইস্যুতে কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, ‘সিবিআই এখন ‘বিবিআই’তে (বিজেপি ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) পরিণত হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
কেন্দ্রের সমালোচনা করে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অভিযোগ করেছেন, মোদী ঘনিষ্ঠ অফিসারকে ঘুষকাণ্ডের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, রাফাল তদন্ত শুরু করার কথা ছিল অলোক ভার্মার। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। সিবিআই প্রধানকে বেআইনিভাবে সরানো হয়েছে জানিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করছে।
এদিন সরকারের পক্ষে সাফাই দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, সিবিআই-এর দুই শীর্ষ কর্তা একে অপরের বিরুদ্ধে যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন, তা নজিরবিহীন। এই পরিস্থিতি থেকে সিবিআই-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে বের করে আনাই এখন প্রধান কাজ। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, তাঁর অপসারণের বিরুদ্ধে এদিন সকালেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অলোক ভার্মা। তাঁর আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা আগামী শুক্রবার। অন্যদিকে, সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মাকে সরানো ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। পাশাপাশি, যাঁকে সিবিআই-এর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান করা হয়েছে, সেই নাগেশ্বর রাওয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, নাগেশ্বর রাও এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে বহু জায়গায় জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে, যে টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সিবিআই স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে হাওয়ালায় অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ ই অক্টোবর মামলা শুরু করে সিবিআই। তারপর থেকেই জটিলতার সূত্রপাত। অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ আনেন আস্থানা এবং মঙ্গলবার তিনি দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আস্থানাকে আগামী সোমবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানায় দিল্লি হাইকোর্ট।
নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় মঙ্গলবার রাতে। রাত পৌনে ১ টা নাগাদ দিল্লি পুলিশ সিবিআই অফিসে হাজির হয়। অফিস ঘিরে রাখা হয়। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার নাগেশ্বর রাওকে এসকর্ট করে দিল্লি পুলিশ পৌঁছে দেয় সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই অফিসে। পাশাপাশি, অলোক ভার্মা এবং রাকেশ আস্থানার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁদের ছুটিতে যাওয়ার নোটিশ।

Comments are closed.