আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির জোরালো প্রমাণ আছে, সুপ্রিম কোর্টে জানালেন সিবিআই-এর বদলি হওয়া তদন্তকারী অফিসার এ কে বাসসি

শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ! সিবিআই-এর শীর্ষ স্তরে নজিরবিহীন দ্বন্দ্বের জেরে দিন দশেক আগেই কেন্দ্র ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে সংস্থার বিবাদমান প্রধান অলোক ভার্মা ও স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে। এই অপসারণের বিরুদ্ধে অলোক ভার্মা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আস্থানাও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান, যদিও তা গ্রাহ্য হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে তদন্ত দু’সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনকে (সিভিসি)।
এবার রাকেশ আস্থানার অস্বস্তি বাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকারী সিবিআই অফিসার এ কে বাসসি। রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার দুর্নীতির মামলায় তদন্ত শুরু করেছিলেন অলোক ভার্মা। সেই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এ কে বাসসি। অলোক ভার্মা এবং রাকেশ আস্থানাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর এই এ কে বাসসিকে সিবিআই সদর দফতর থেকে রাতারাতি সুদূর আন্দামানে বদলি করে দেন সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নাগেশ্বর রাও। নাগেশ্বর রাও পদে বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ২৪ অক্টোবর জনস্বার্থের কারণ দেখিয়ে দিল্লি থেকে আন্দামানে সরিয়ে দেন ভার্মার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন সিবিআই অফিসার ও তদন্তকারীকে। যাঁর মধ্যে অন্যতম একে বাসসি। ইনি, মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ব্যবসায়ী সতীশ সানার কাছ থেকে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত চালাচ্ছিলেন। মাঝপথেই তাঁকে সেই তদন্ত থামিয়ে দিল্লি থেকে আন্দামান পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে তাঁর এই ট্রান্সফারের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়েছেন সিবিআই অফিসার এ কে বাসসি। পাশাপাশি তিনি, কোর্টে জানিয়েছেন, রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, তার পক্ষে জোরালো প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আবেদন, বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে যেন আস্থানার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
ভার্মা ও আস্থানা দু’জনের দফতর সিল করেই বর্তমানে তদন্ত চালাচ্ছে সিভিসি। তারই মাঝে এ কে বাসসির এদিনের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর ফলে সিবিআই-এর অপসারিত প্রধান অলোক ভার্মারই হাত শক্ত হল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিশেষ করে, বিরোধীরা যখন অভিযোগ করছে, মোদী-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গুজরাত ক্যাডারের অফিসার রাকেশ আস্থানাকে বাঁচানোর জন্যই সরানো হয়েছে অলোক ভার্মাকে। আস্থানার বিরুদ্ধে তাঁর কাছে দুর্নীতির জোরালো প্রমাণ আছে বলে খোদ তদন্তকারী অফিসার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করায় আস্থানা আরও সমস্যায় পড়লেন।
উল্লেখ্য, আস্থানার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা ব্যবসায়ী সতীশ সানা সোমবারই তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট অলোক ভার্মার আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্দেশ দিয়েছে, সিবিআই অন্তর্বতীকালীন প্রধান এম নাগেশ্বর রাও রুটিন কাজ ছাড়া কোনও পলিসি ডিসিশন নিতে পারবেন না। পদে বসেই তিনি অফিসারদের অপসারণের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা খামবন্দি করে কোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এরই মাঝে বদলি হওয়া তদন্তকারী অফিসার বাসসির আদালতে চলে যাওয়া গোটা মামলায় নতুন মাত্রা যোগ করল।

Comments are closed.