ভোট মিটলেও তাঁরা ময়দানে, ‘সেলেব’ নিয়ে ধারণা ভাঙছেন একুশের তারকারা

ভোট পর্ব মিটে গেলেও তাঁরা নিয়মিত নিজ নিজ নির্বাচনী ক্ষেত্রে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে উদ্যোগী হচ্ছেন

অভিনেতাদের নেতা হওয়া নিয়ে প্ৰচলিত বদনাম হল, তারকা মানেই ‘বসন্তের কোকিল’। হারুক বা জিতুক ভোট মিটলেই আর দেখা পাওয়া যায় না। মানুষ আপদে বিপদে তাঁদের কাছে পান না।

তবে একুশের নির্বাচনে একঝাঁক তারকা প্রার্থী তাঁদের নিয়ে তৈরি ধারণা ভাঙছেন। ভোট পর্ব মিটে গেলেও তাঁরা নিয়মিত নিজ নিজ নির্বাচনী ক্ষেত্রে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে উদ্যোগী হচ্ছেন।

এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন চণ্ডীপুরের তৃণমূলের তারকা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। ভোটে জিতে নিজস্ব উদ্যোগে অনুগামীদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করেছেন। করোনা সংক্রমিতদের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া, খাওয়ার পৌঁছে দেওয়া সহ একাধিক কাজ করছে সোহমের টিম। সম্প্রতি যশ ঘূর্ণিঝড়ের পর দুর্গত এলাকায় ঘুরে দেখেছেন। এক কোমর জলে নেমে দুর্গতের সাহায্যে কাজ করেছেন পর্দার নায়ক। যশের আগে থেকেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন নিজের কেন্দ্র চণ্ডীপুর।

কিছুটা একই ছবি পরিচালক রাজ চক্রবর্তীরও। ভোটের আগে থেকেই তিনি বারাকপুরে রয়েছেন। করোনা থেকে শুরু করে যশ, সব সংকটেই রাজকে এলাকায় পাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। দুঃস্থদের হাতে কখনও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। কখনও আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ পেয়ে ছুটে যাচ্ছেন অভিযোগকারীর বাড়ি।
সম্প্রতি বারাকপুরে এক বাসিন্দার বাড়িতে জল জমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ব্যক্তি অভিযোগ জানান। নব নির্বাচিত বিধায়ক দ্রুত পৌঁছে যান ওই ব্যক্তির বাড়ি। রাজের এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন স্থানীয় মানুষ।

করোনায় বহু মানুষ রোজগার হারিয়েছেন। নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের গরিব মানুষদের জন্য অভিনেতা তথা উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক শুরু করেছেন ‘দুয়ারে অন্ন’ কর্মসূচি। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রান্না থেকে শুরু করে সমস্ত কাজের তদারকি করছেন। খাওয়ার পরিবেশন করতেও দেখা যাচ্ছে বাংলা ছবির অন্যতম তারকাকে।

ভোটে হেরেছেন বাঁকুড়ার তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সায়ন্তিকা ব্যানার্জি। কিন্তু তাতেও দমে যাওয়ার পাত্রী নন অভিনেতা। ভোটের পরেও মাঝে মাঝেই তিনি কলকাতা থেকে পাড়ি দিচ্ছেন বাঁকুড়াতে। দলীয় সাহায্যে এবং নিজস্ব উদ্যোগে বাঁকুড়া বিধানসভার জন্য শুরু করেছেন দুয়ারে অক্সিজেন, দুয়ারে খাওয়ারের মত বেশকিছু কর্মসূচি। বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীর উদ্যোগে একটি সেফ হোম চলছে।

নির্বাচনের পরাজিত হয়েছেন তৃণমূলের আরেক তারকা প্রার্থী সায়নী ঘোষ। ভোটের পরেই সায়নী ঘোষকে চাই বলে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার অনেকে দাবি জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। সায়নীও থেমে থাকেননি। ঘুরেফিরে বারবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে যাচ্ছেন। মাস্ক, স্যানিটাইজার বিলি থেকে নানারকম সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন বাসিন্দাদের হাতে।

ভোটের কিছুদিন আগেই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন অভিনেতা হিরণ চ্যাটার্জি। দিলীপ ঘোষের সিট খড়গপুর সদর থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছেন হিরণ। শোনা যাচ্ছে ভোটের পর থেকে তারকা বিধায়ক খড়গপুরেই থাকছেন। কয়েকদিন আগেই নিজের বিধানসভার অন্তর্গত রেল হাসপাতালের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন। স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনে ছুটে যাচ্ছেন বাংলা ছবির জনপ্রিয় নায়ক।

মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে হেরে গেলেও কৌশানি মুখার্জিও কৃষ্ণনগরে যাচ্ছেন প্রায় নিয়মিত। তাঁর তত্বাবধানেই সেখানে চলছে ‘আমি আপরাজিতা কিচেন’।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে কম বয়সী তারকাদের এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ছবি বদলে দিতে পারে তাঁদের নিয়ে চিরাচরিত ধারণাকে।

Comments are closed.