NPR 2020: আলোচনা চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলকে চিঠি দিল কেন্দ্র, এনপিআর হবে না জানিয়েছে দুই রাজ্যই

এনপিআর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল সরকারকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এনপিআর হল এনআরসি-র প্রথম ধাপ, এই অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ রাজ্যে এনপিআরের কাজ মুলতুবি রেখেছেন। একই রাস্তা নেয় বাম শাসিত কেরলও। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়ে দেন, তাঁর রাজ্যে এনপিআর হবেই না। এনপিআর নিয়ে দুই রাজ্য সরকারের সংশয় কাটাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের সঙ্গে আলোচনা করতেও রাজি আছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। তবে নবান্নের দাবি, তারা এমন কোনও চিঠির কথা জানে না।
পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের পাশাপাশি পঞ্জাব, ছত্তীশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো কংগ্রেসের হাতে থাকা রাজ্যগুলিও এনপিআরের বিরোধিতা করেছে। সেখানে শুধু বাংলা ও কেরলকেই কেন চিঠি পাঠাল কেন্দ্র, কেন শুধু এই দুই রাজ্যের সঙ্গেই আলোচনার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, বেশ কয়েকটি রাজ্যে এনপিআর নিয়ে বিরোধিতা হলেও একমাত্র কেরল ও পশ্চিমবঙ্গ থেকেই কেন্দ্রকে সরকারি ভাবে জানানো হয়, তারা এনপিআর করবে না। অন্য কোনও রাজ্য থেকে যেহেতু সরকারি ভাবে কেন্দ্রের কাছে আপত্তি জানিয়ে চিঠি লেখেনি, তাই তাদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এনপিআর নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রের কাছে। তাছাড়া এনপিআর নিয়ে দিল্লির সরকারি বৈঠকেও একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি। পিনারাই বিজয়নের সরকারও কেরলের ‘রেজিস্টার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অফ ইন্ডিয়া’র স্থানীয় শাখার কাছে জাতীয় জনগণনা পঞ্জি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ওই কেন্দ্রীয় আধিকারিক জানান, তাই এই দুই রাজ্যকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে দিল্লি।
১ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে এনপিআর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত ধরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হাজির থাকবেন দিল্লির ওই অনুষ্ঠানে। প্রথমে এ রাজ্যে এনপিআরে নাম তোলার কাজে সায় দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে তৃণমূল সরকার। এনপিআর ফর্মের আটটি প্রশ্ন নিয়েই বিরোধীরা আপত্তি তুলেছেন। এই প্রথমবার এনপিআর ফর্মে নাগরিকের মাতৃভাষা, জন্মভূমি, বাবা-মায়ের জন্মস্থান ও জন্মের তারিখ এবং আধার কার্ডের নম্বর চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, এনপিআর ফর্মে বাংলাভাষীদের নিশানা করা হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে থাকা কোনও বাঙালি যদি তাঁর মাতৃভাষা বাংলা এবং বাবা-মায়ের জন্মস্থান ওপার বাংলা (বাংলাদেশ) বলে জানান, তাহলে সেই ব্যক্তিকে বাংলাদেশি হিসেবেই চিহ্নিত করবে কেন্দ্র। আর ঘটনাচক্রে তিনি যদি মুসলিম ধর্মাবলম্বী হন, তাহলে তাঁর নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা প্রবল। বিরোধীদের অভিযোগ, এই ধরনের মানুষদের চিহ্নিত করতেই এনপিআর তৈরি হচ্ছে।
এদিকে এনপিআর নিয়ে দিল্লির সরকারি বৈঠকে বাবা-মায়ের জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ দেওয়াতা বাধ্যতামূলক নয় বলে ঘোষণা করা হলেও পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দেন, এনপিআর ফর্মে সব অংশই গুরুত্বপূর্ণ, সবটাই পূরণ করতে হবে। যার ফলে এনপিআর নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে।

Comments are closed.