দেশজোড়া বিক্ষোভের মুখে হিন্দি-প্রশ্নে পিছু হঠল কেন্দ্র, খসড়া নীতির বিরোধিতা করে ট্যুইট সীতারমণ-জয়শঙ্করের

দেশজুড়ে স্কুল পাঠ্যে হিন্দি ঢোকানোর প্রয়াসের বিরোধিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে আন্দোলন-বিক্ষোভ কর্মসূচি। মোদী সরকারের এই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতার তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিখ্যাতরা। এই পরিস্থিতিতে এবার বিজেপির অন্দরেই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়ে গেল। জোর করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার কোনও ইচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের নেই, এই মর্মে ট্যুইট করলেন মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ অ-হিন্দিভাষী সদস্য নির্মলা সীতারমণ এবং এস জয়শঙ্কর। রাজ্যগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই চূ়ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও সোশ্যাল মিডিয়া বার্তার মাধ্যমে আশ্বস্ত করেছেন তাঁরা।
রবিবার একটি ট্যুইটে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর লেখেন, জোর করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হবে না। মানব সম্পদ মন্ত্রকে জমা দেওয়া রিপোর্টটি খসড়া মাত্র। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ নিজের মাতৃভাষায় ট্যুইট করে জানিয়েছেন, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনও সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেনি সরকার। সবার মত শুনেই শিক্ষানীতি চালু করা হবে। জোর করে কোনওকিছুই চাপিয়ে দেওয়া হবে না।

পাশাপাশি, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিষঙ্ক, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়াও এই বিষয়ে আশ্বস্ত করে রাজ্যগুলিকে জানিয়েছেন, আঞ্চলিক ভাষা ও আঞ্চলিক সমস্যাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোনও রাজ্যের ওপরই জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হবে না।

মোদী সরকারের নয়া শিক্ষানীতিতে দেশজুড়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করা হবে, এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই বাংলা, তামিলনাড়ু সহ অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন বলেন, আমাদের রক্তে হিন্দি নেই। তাই জোর করে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা হলে তামিলনাড়ুতে ভাষা আন্দোলন আরও তীব্র হবে। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিদ্বজ্জনেরা। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা এসেছে কর্ণাটক থেকেও। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপি এবং আরএসএস হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান নীতি প্রণয়নের পক্ষে। দেশের প্রত্যেকটি পড়ুয়া যাতে হিন্দি শিখতে বাধ্য হয়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তাঁরা।

ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বাধীন কমিটি সম্প্রতি যে জাতীয় খসড়া নীতি পেশ করেছে, তাতে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে স্থানীয় ভাষা এবং ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি শেখারও সুপারিশ করা হয়েছে। তারপর থেকেই জাতীয় খসড়া শিক্ষানীতির বিরোধিতায় সরব দেশের অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলো।

Comments are closed.