জগদ্ধাত্রী পুজোয় সেজে উঠছে চন্দননগর, হবে না কার্নিভাল, করোনা বিধি মেনে চলতে আবেদন রাজ্যের

জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই বাঙালির চোখে ভেসে ওঠে দুটি শহরের ছবি। চন্দননগর ও কৃষ্ণনগর। তবে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, বৃহদাকার প্যান্ডেল, শোভাযাত্রা, প্রতিমার মুখমণ্ডল ইত্যাদিতে ভিন্নতার ও সৌন্দর্যের পরিচয় দিয়ে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে গেছে চন্দননগর। এখানকার আলোকসজ্জা বিশ্বজুড়ে খ্যাতিলাভ করেছে। তবে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনাপর্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে পণ্ডিত মহলে।

সপ্তদশ শতকে পর্তুগীজদের রমরমা শেষ হলে ফরাসিরা বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে হুগলি নদীর নিকটবর্তী অঞ্চলে। ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরিতে তাদের বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কালক্রমে পন্ডিচেরি তাদের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শাসনকর্তা শায়েস্থা খাঁ তাদের চন্দননগরে কুঠি নির্মাণের অনুমতি দেন। তখন থেকেই চন্দননগর একটি ঐতিহাসিক শহর নামে পরিচিত। চন্দননগরের আরও এক বিখ্যাত জিনিস হল জলভরা সন্দেশ।

গত কয়েক বছর ধরেই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসারে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগে একদিকে যেমন চন্দননগরে বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে, পাশাপাশি কার্নিভালের আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই পুজোর পরিচিতি আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

চন্দননগরে পরিচিত কিছু পুজো হল চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী, ডুপ্লেক্সপট্টির জগদ্ধাত্রী ও বউবাজার সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো।

ডুপ্লেক্সপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো

আলোকসজ্জা, প্রতিমার আকার, থিম ইত্যাদি মিলিয়ে ডুপ্লেক্সপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। পুজো কমিটির সেক্রেটারি আবির লালা শুর জানান, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে এই পুজো শুরু হয়। জগদ্ধাত্রী মায়ের মূর্তি অন্য বছরের মতো এ বছরও একই রকমভাবে তৈরি হচ্ছে। পুজো কমিটির অন্য এক সদস্য সুজিত কর্মকার বলেন, গত বছর পুজো প্যান্ডেলের থিম ছিল ‘সচেতন পৃথিবীর অচেতন মানুষ’, যা বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। মূর্তি নির্মাণ করেন শ্রী বাসু পাল এবং তাঁর বংশধরেরা। তবে করোনার জন্য অন্য বছরের তুলনায় এ বছর প্যান্ডেলের আকৃতি তুলনামূলক ছোট করা হয়েছে।

 

চাউলপট্টি জগদ্ধাত্রী পুজো

চাউলপট্টি জগদ্ধাত্রী চন্দননগরের ‘আদি মা’ নামে পরিচিত। কথিত আছে, এই পুজোর প্রচলন করেন ফরাসি দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এখানকার আদি মায়ের পুজো। চন্দননগরের শিববাটী ঘাটের কাছেই আদি মায়ের মণ্ডপ। একসময় সেখানকার লক্ষীগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা পুজোর দায়িত্বভার বহন করতেন। হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর এখানকার জগদ্ধাত্রী মায়ের দর্শন করার জন্য ভিড় করেন।

 

বউবাজার সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো

চন্দননগর স্টেশনের কাছেই জাঁকজমকপূর্ণ পুজোগুলির মধ্যে বউবাজার সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৮ সালে এই পুজোর সূচনা হয়। কমিটির সম্পাদক অয়ন মান্না জানান, এ বছর করোনা প্রতিরোধে প্যান্ডেলের আকার ছোট ও চারপাশের ব্যারিকেডের ব্যবস্থা  করা হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার জগদ্ধাত্রী মায়ের মূর্তির কাঠামোও ছোট করা হয়েছে।

পুজোর শোভাযাত্রা চন্দননগরের কার্নিভাল নামে পরিচিত। দশমীর দিন শয়ে শয়ে আলোকসজ্জার সাথে জগদ্ধাত্রী মায়ের শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবছর মারণ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শোভাযাত্রা বন্ধ রাখতে বলেছে রাজ্য সরকার। তবে কার্নিভাল বন্ধ থাকলেও, চন্দননগরের পুজোয় সমষত্ব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।

Comments are closed.