মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জির ঠিকানা এখন এসএসকেএমের উডবার্ন ব্লকের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন। নন্দীগ্রামের ঘটনার পর এখানেই ভর্তি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেবিনটি রয়েছে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডের দোতলায়। দেশে আর কোনও সরকারি হাসপাতালে উন্নত পরিষেবা সমেত এমন ঝাঁ কেবিন রয়েছে কিনা সন্দেহ। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মুখ্যমন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতা, ভিভিআইপি ছাড়া এই কেবিনে থেকে অন্য কারোর পক্ষে চিকিৎসা করানোও সম্ভব নয়। হেরিটেজ স্থাপত্য শৈলী, লাল কাপের্ট, ঘোরানো সিঁড়ি ও গাছপালা ঘেরা পরিবেশই উডবার্নের ঐতিহ্য।
কিন্তু প্রশ্ন হল ১১, ১২ পর ১৩ না হয়ে সাড়ে ১২ কেন? উডবার্ন ব্লকের বয়স মাত্র ১১৭ বছর! পথ চলা শুরু ১৯০১ সালে। ব্রিটিশদের ধারণা ছিল ১৩ নম্বর আনলাকি। তাই ১২ র পর ১৩ না গিয়ে সাড়ে ১২ নম্বর দেওয়া হয়। ৩৬ শয্যাবিশিষ্ঠ এই ব্লকের শেষ ওয়ার্ড সাড়ে ১২ নম্বরই।
বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে এই কেবিন। কোনও বিশিষ্ঠজনের আসার খবরে খোলা হয় এই কেবিন। দেশ বা বিদেশের রাজনৈতিক নেতারা কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এলে তাঁদের মেডিক্যাল টিম গঠন করেন এসএসকেএমের সুপার।
গভর্নর লর্ড উডবার্নের নামে পিজির এই ব্লকের নাম উডবার্ন। ব্রিটিশ আমলে চিকিৎসকরা এখানে আসতেন ঘোড়ায় চেপে। সেইকারনে ঘোড়াশালও ছিল এই ব্লকের পাশে। প্রথমে এই বিলাসবহুল ব্লকে শুধুমাত্র ব্রিটিশদেরই চিকিৎসা হত। পরে ভারতীয়দের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই ব্লকের দরজা।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের চিকিৎসা হয়েছিল এখানেই। মাইকেল মধুসূদন দত্ত দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন এখানে। এছাড়াও সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসা হয়েছিল এখানে।
ব্রিটিশ আমলের ব্যবহৃত জিনিস রাখা থাকত সারে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। বর্তমানে আধুনিকীকরণ করা হয় এই ওয়ার্ডের। কিন্তু মধ্যবিত্তদের জন্য সুলভে নার্সিংহোমের মতো আধুনিক পরিষেবা দিতে মমতা উডবার্নের বাকি ৩৬টি কেবিনও সোফা, টিভি দিয়ে ঝাঁ চকচকে করে তুলেছেন।
মধ্যবিত্ত রাজ্যবাসীকে সাধ্যের মধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা দিয়েছেন মমতা। সরকারি হাসপাতালে ঝাঁ-চকচকে প্রাইভেট কেবিন চালুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু সাড়ে ১২ নম্বরটি বাদে এই ওয়ার্ডের বাকি কেবিনগুলিতে মধ্যবিত্তরা সাধ্যমত চার্জ দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন।
Comments are closed.