কাজে ফিরুন, কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নয়, নবান্ন থেকে ফের বার্তা মমতার, বললেন, চাই না কারও কেরিয়ারে কালি লাগুক

সরকার আপনাদের সমস্ত দাবি মেনে নিয়েছে। আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না পুলিশ। এবার কাজে ফিরুন। হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনুন। মানুষ চিকিৎসা পাক। নবান্ন থেকে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে না চাইলে প্রয়োজনে রাজ্যপাল বা অন্য কারও সঙ্গেও কথা বলতে পারেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা।

শনিবার বিকেল ৫ টায় নবান্নে আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু শনিবার সকালেই এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, যাবেন না নবান্নতে। ফলে কাটেনি অচলাবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী ফের ৫ সিনিয়র ডাক্তারকে ডাকেন। তাঁরা নবান্নে গিয়ে জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসানোর দৌত্যে ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরই মুখ্য সচিব মলয় দেকে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য সচিব জানান, এনআরএসের ঘটনার পরেই হাসপাতালগুলোতে পুলিশ নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এলাকায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালে মোতায়েন রয়েছে এসিপি পদমর্যাদার অফিসার এবং তাঁর টিম।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর সেদিন এসএসকেএম যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। নবান্ন যাওয়ার পথে তিনি জানতে পারেন, এসএসকেএমে এমার্জেন্সি বিভাগ বন্ধ। তাই তিনি পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশের হেনস্থার মুখে পড়েন বলে শনিবার নবান্ন থেকে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়, তাঁকে উদ্দেশ্য করে ব্যবহার করা হয় অশালীন শব্দ। তাও পুলিশকে কোনও ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেন তিনি। তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করতে তিনি শুক্রবার নবান্নে অপেক্ষা করেছিলেন। তাঁকে জানানো হয়, আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা শনিবার আসবেন। সেই মতো অন্য সমস্ত কাজ বাতিল করে শনিবার নবান্নে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য আধিকারিক ও মন্ত্রীরা। কিন্তু শনিবারও এলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। এই পরিস্থিতিতে ফের ডাক্তারদের কাজে ফেরার আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, সরকারের হাতে এসমা প্রয়োগ করার সংস্থান রয়েছে। তালিকা ধরে ধরে দেশের কোন কোন রাজ্যে কোন পরিস্থিতিতে এসমা প্রয়োগ হয়েছে, তাও জানান। কিন্তু তিনি তা করতে চান না। গণতন্ত্র ও মানবিকতায় বিশ্বাস রাখলে ওসব করা যায় না, মন্তব্য মমতার। পাশাপাশি মমতার প্রশ্ন, আর কতদিন এভাবে চলবে? আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, এবার কাজে ফিরুন। স্বাভাবিক হোক স্বাস্থ্য পরিষেবা। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানান রাজ্যে যে সমস্ত সিনিয়র ডাক্তার রোগী দেখার কাজ জারি রেখেছেন তাঁদের।

শুক্রবার এনআরএসে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে মমতাকে বার্তা দিয়েছিলেন অপর্ণা সেন। এদিন অপর্ণার মন্তব্যেরও জবাব দেন মমতা। বলেন, ওঁরা গোটা ব্যাপারটা জানেন না, ওঁদের আর দোষ কী? এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যপালের সঙ্গেও তাঁর এব্যাপারে কথা হয়েছে। রাজ্যপাল সন্তুষ্ট। এদিন সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীনই কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে যান, তাঁরা কাজে ফিরতে ইচ্ছুক। তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্নের দরজা আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য ২৪ ঘণ্টাই খোলা রয়েছে। যদি মনে করেন আলোচনায় বসে সুষ্ঠু সমাধানসূত্র বের করা সম্ভব, চলে আসুন। এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারদের বার্তা মমতার। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না সরকার। কারও কেরিয়ারে কালো দাগ লাগুক, সেটা চাই না, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Comments are closed.