#মিটুঃ যৌন হেনস্থার অভিযোগ টাটা গোষ্ঠীর তাজ হোটেলের প্রাক্তন সিইও’র বিরুদ্ধে

২০১৬ সালে যখন রতন টাটা বনাম সাইরাস মিস্ত্রি সংঘাত তুঙ্গে, সেই সময় টাটার মালিকানাধীন তাজ গোষ্ঠীর হোটেলের সিইও তথা এমডি রাকেশ সারনার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন হোটেলের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্টান্ট পদে নিযুক্ত এক মহিলা কর্মী। সেসময় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেলেও, বর্তমানে ভারতে যে ‘মি টু’ মুভমেন্ট শুরু হয়েছে তার প্রেক্ষিতে ফের মুখ খুললেন ওই মহিলা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই মহিলা জনিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল সেই সময়। যদিও তাঁর বক্তব্য, অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও প্রাক্তন সিইও রাকেশ সারনার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
আমেরিকা নিবাসী প্রবাসী ভারতীয় ওই মহিলা জানান, ২০০৯ সালে যখন তাঁর ২৩ বছর বয়স সে সময় তিনি টাটা গোষ্ঠীতে যোগ দেন। তারপর মাস্টার ডিগ্রির জন্য কিছু দিন ওই চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর ২০১৪ সালে ফের তিনি টাটা গোষ্ঠীর একজন কর্মচারী হিসাবে ফিরে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে যখন তিনি পুনরায় টাটায় ফেরেন সে সময় গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি। তাঁকে সাইরাসের অফিসেই ইউরোপ, মধ্য পূর্ব এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্কঘটিত বিভাগে কাজ দেওয়া হয়। মহিলার দাবি, সেসময় সারনা তাঁকে জানান, তাজ হোটেলে তাঁকে এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্টান্ট করা হতে পারে। ওই মহিলার কথায়, সেই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে ফোনে তাঁর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয় সারনার। সারনাকে তিনি ফোনে জানান যে, তিনি তাঁর মাইনে নিয়ে সন্তুষ্ট নন। মহিলার দাবি, সেসময় ফোনে তাঁকে সারনা বলেন, ‘তুমি যা দেখতে, তাতে তোমার কোটি টাকা পাওয়া উচিত। কিন্তু আমার কাছে এত টাকা নেই।’ ওই মহিলার কথায়, সেসময় তিনি বুঝেছিলেন লোকটি সুবিধের নয়।
এরপর ২০১৫ সালে তাঁকে তাজ হোটেলেই কর্মচারী হিসাবে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। তাজ হোটেল গ্রুপের সিইও তথা এমডি রাকেশ সারনার এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্টান্ট হিসেবে তিনি কাজে যোগ দেন। মহিলার বক্তব্য, এই কাজে যোগ দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই সারনা তাঁর সঙ্গে অভব্যতা শুরু করেন। নানা অছিলায় তাঁর রূপের প্রশংসা থেকে শুরু করে তাঁকে নানারকম প্রস্তাব দিতে শুরু করেন সারনা। মহিলার দাবি, বারবার প্রতিবাদ করা সত্বেও বা বিষয়গুলি তিনি ভালোভাবে নিচ্ছেন না বলা সত্বেও সারনা থামেননি। এমন কথা সারনা বলেন যে, তিনি কেঁদে ফেলতেন, কী করবেন বুঝতে না পেরে আতঙ্ক, হীণমন্যতাবোধ তাঁকে গ্রাস করত।
মহিলার দাবি, চাইলেও তিনি হোটেলের যৌন হেনস্থা বিরোধী কমিটিতে অভিযোগ জানাতে পারছিলেন না। কারণ, সারনা নিজে ওই কমিটিতে ছিলেন।
এই মহিলার দাবি, তিনি তাই বাধ্য হয়ে বিষয়টি তাজের বোর্ড মেম্বার ও টাটা গোষ্ঠীর তৎকালীন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির অফিসে চিঠি দিয়ে জানান, কিন্তু এতে ফল হয় উল্টো। তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হয়, নয়তো কমিউনিকেশন বিভাগে ব্যাক অফিস কাজে যোগ দিতে বলা হয়।
বারবার বলা সত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি টাটা গোষ্ঠীর চাকরি ছেড়ে একটি ল ফার্মে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, চাকরি ছাড়ার সময় টাটা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়, রেজিগনেশন লেটারে তাঁকে ‘ব্যক্তিগত কারণে চাকরি ছাড়ছেন’ এই কথাটি লিখতে হবে। চাকরি ছেড়ে মিডিয়ার সামনে মুখ খুললে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
মহিলার দাবি, তিনি চাকরি ছাড়ার প্রায় এক বছর পর ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে টাটা গোষ্ঠীর তরফে নাম না করে, তাঁর রেজিগনেশন চিঠিটি প্রকাশ্যে আনা হয়। সে সময় রতন টাটা বনান সাইরাস মিস্ত্রি দ্বন্দ্ব চরমে। সারনা মিস্ত্রির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। মহিলার কথায়, তাঁকে এবিষয়ে মুখ খুলতে না বলে কেন টাটা গোষ্ঠী নিজেরাই তাঁর চিঠি প্রকাশ্য আনলেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি। গোটা ঘটনায় তিনি হকচকিয়ে যান। নতুন করে ঘটনার তদন্ত হবে বলে নয়া কমিটির কাছে তাঁর অভিযোগ পত্রগুলি পাঠানো হয়। এরপর সাইরাস মিস্ত্রি টাটা গোষ্ঠী ছাড়ার পরেই ২০১৭ সালের মার্চ মাসে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন রাকেশ সারনা।
কিন্তু মহিলার বক্তব্য, অভিযোগের প্রায় দু’বছর পরেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তে কী উঠে এল, তা টাটার তরফে জানানো হয়নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দাবি, মহিলার জমা দেওয়া সব তথ্য তাদের কাছে আছে। কিন্তু এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে টাটাদের তরফে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি।

Comments are closed.