দৃষ্টান্ত: মহারাষ্ট্রে বিধায়ক বেচা-কেনার প্রতিযোগিতায় ব্যতিক্রম সিপিএম বিধায়ক বিনোদ নিকোলে মানুষের পাশে

ঝাঁ চকচকে বহুমূল্য পাঁচতারা হোটেল। ভারতীয় গণতন্ত্র রক্ষায় এখন এদেরই চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। সাম্প্রতিক মহারাষ্ট্র তা দেখিয়ে দিয়েছে চোখে আঙুল দিয়ে। কংগ্রেস, এনসিপি কিংবা শিবসেনা নিদেনপক্ষে নির্দল। সকলের সমস্ত বিধায়ক এখন বলিউডের শহরের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে বন্দি। কোনওভাবেই যেন বিজেপি তাঁদের কাউকে ভাঙিয়ে নিতে না পারে। বাণিজ্যিক রাজধানীতে যখন এই চিত্র, তখন মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় ফের কৃষকদের নিয়ে পথে নেমে পড়েছেন এক ভদ্রলোক। ঘটনাচক্রে তিনিও বিধায়ক। কিন্তু রাজ্যের ২৮৮ জন বিধায়কের মধ্যে তিনি ব্যতিক্রম। তিনি দাহনুর সিপিএম বিধায়ক বিনোদ নিকোলে। তাঁকে ভাঙানো যায় না, কারণ তিনি ভাঙেন না।

সারা ভারত কিষাণ সভার সভাপতি ডক্টর অশোক ধাওয়ালে জানাচ্ছেন, মহারাষ্ট্রের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাঁদের কাছেও এনসিপি, শিবসেনা, কংগ্রেসের তরফে অনুরোধ এসেছিল, বিনোদ নিকোলেকে সত্বর কোনও পাঁচতারা হোটেলে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় স্থানান্তরিত করতে। যে প্রস্তাবে পত্রপাঠ না করে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের সিপিএম নেতৃত্ব।
কিন্তু কেন এই ভয়? সারারাত জেগে বাসি মুখে সরকার গঠন থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা। এই ক’দিনে মহারাষ্ট্র দেখেছে অনেক খেলাই। মহারাষ্ট্রের আনাচে কানাচে এখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে নাকি ঘুরছেন বিজেপির নেতারা। মহারাষ্ট্রে চলছে অপারেশন পদ্ম। প্রথমে আকাশ ছোঁয়া টাকার অঙ্ক ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে বিধায়কদের, তাতেও না মানলে ইডি, সিবিআই তো থাকলই হাতের পাঁচ। এই জোড়া ফাঁদে পা দেওয়ার সম্ভাবনা আঁচ করে আগেভাগেই বিধায়কদের নিয়ে গিয়ে তোলা হয়েছে আপাত নিরাপদ পাঁচতারার বিলাসবহুল আস্তানায়। কিন্তু একদা পাওভাজি বেচে সংসার চালানো দীর্ঘদিনের বাম নেতা বিনোদ নিকোলে অন্য ধাতুতে গড়া। তাঁকে ভাঙানো যাবে না। একথা যেমন জানেন তাঁর দলের কর্মীরা, তেমনই সেই বার্তা পৌঁছেছে বিধায়ক শিকারে বেরুনো শিকারীদের কাছেও। তাই রাজ্যের তামাম বিধায়ক যখন ভিড় করেছেন নামি-দামী পাঁচতারা হোটেলে, তখন কৃষকের মাটির দাওয়ায় বসে, গামছা দিয়ে হাওয়া খেতে খেতে সিপিএম বিধায়ক তাঁদের সমস্যার কথা শুনছেন মন দিয়ে।

নির্বাচনী হলফনামায় নিজের সম্পত্তির পরিমাণ জানিয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকার সামান্য বেশি। মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে গরিব বিধায়কও ডিওয়াইএফআইয়ের এই প্রাক্তন কর্মী। কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে হাজার হাজার কৃষক খালি পায়ে মুম্বইয়ের পথে হাঁটা দিয়েছিলেন, সেই ঐতিহাসিক লং মার্চের অন্যতম সংগঠক কৃষক সভার বিনোদ নিকোলে। তাই আজ মহারাষ্ট্র যখন টাকা কিংবা ক্ষমতা দিয়ে বিধায়ক কেনার প্রতিযোগিতা দেখছে বিস্ফারিত চোখে, তখন কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে ফের পথে নেমে পড়েছেন রাজ্যের একমাত্র বাম বিধায়ক। ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা বলে যাওয়াই তাঁর রাজনীতি। বলাই বাহুল্য পাঁচতারার আপাত নিরাপদ আস্তানা তাঁর কাছে তুচ্ছ।

 

Comments are closed.