করোনা সংক্রমিত সাংবাদিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু, এইমসের গাফিলতি নাকি দৈনিক ভাস্কর থেকে ছাঁটাইয়ের ভ্রূকুটি? সিবিআই তদন্ত দাবি বন্ধুদের

করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে নাগাড়ে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এর মধ্যে দিল্লির এইমসে এক হিন্দি দৈনিকের সাংবাদিকের রহস্যমৃত্যুতে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল। যে সংবাদমাধ্যমের হয়ে তিনি কাজ করতেন তার দিকে আঙুল উঠেছে। তরুণ শিসোদিয়া নামে ৩৭ বছর বয়সী ওই সাংবাদিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও, সাংবাদিকের বন্ধুদের দাবি, জনপ্রিয় হিন্দি খবরের কাগজ দৈনিক ভাস্করে কাজ করা ওই সাংবাদিক লকডাউনের সময় থেকে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছিলেন। একে তাঁরা ‘ইনস্টিটিউশনাল মার্ডার’ বলে দাবি করেছেন। সেইসঙ্গে মৃত্যুর আগে বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তরুণ শিসোদিয়ার মেসেজ, ‘মার্ডার হো সাকতা হ্যায়’ (মার্ডার হয়ে যেতে পারি) এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নয়া মাত্রা যোগ করেছে। বন্ধুরা পরিকল্পিত খুনের অভিযোগ তুলছেন।

গত ২৪ জুন করোনা সংক্রমিত হয়ে এইমসে ভর্তি হন উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরার বাসিন্দা, পেশায় সাংবাদিক তরুণ শিসোদিয়া। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। পুলিশের দাবি, সোমবার দুপুরে এইমসের চার তলার ট্রমা সেন্টার থেকে ঝাঁপ দেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন বন্ধু ও আত্মীয়রা। সাংবাদিকের বন্ধুদের দাবি, ঠান্ডা মাথার তরুণ শিসোদিয়া কখনওই আত্মহত্যা করতে পারেন না। জানা গিয়েছে, করোনা পজিটিভ ছাড়াও ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন ওই সাংবাদিক।

তাঁর কিছু বন্ধুর দাবি, লকডাউনের সময় থেকেই দৈনিক ভাস্করে তাঁর কাজ চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছিলেন তরুণ। তাঁকে মানসিক চাপ দেওয়া হত, বাধ্য করা হত কাজ ছাড়তে, এমনই অভিযোগ সাংবাদিকের বন্ধুদের। পরে তাঁর ছাঁটাই সাময়িকভাবে রদ হলেও ব্যাপক আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটছিল তরুণের, জানান তাঁরা। এছাড়াও যে সব প্রশ্ন উঠে আসছে তা হল, কেন হঠাৎ করে তরুণকে এইমসের চারতলায় কোভিড ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হল? কেন ঘটনার সময় তাঁর কাছেপিঠে কোনও নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন না? করোনা সংক্রমিত অসুস্থ সাংবাদিক কীভাবে জানলার কাচ ভেঙে ঝাঁপ দিলেন? পাঁচদিন ধরে তিনি অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন না, তা সত্ত্বেও কেন জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়নি?

এইমসের তরফে সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তরুণ শিসোদিয়া একটু সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে আইসিইউ থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হত। যদিও এতে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন সাংবাদিকের বন্ধু ও আত্মীয়রা। কেন মৃত্যুর কিছু দিন আগে এক হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপে তিনি লিখেছিলেন, ‘মার্ডার হো সকতা হ্যায়’? অনেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে হ্যাশট্যাগ জাস্টিস ফর তরুণ শিসোদিয়া ট্রেন্ড। যদিও এ নিয়ে এখনও দৈনিক ভাস্করের কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এইমসের ডিরেক্টরকে কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

Comments are closed.