রাফাল চুক্তি নিয়ে ভারত বা ফ্রান্সে যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত, কেন্দ্রকে স্বস্তি দিয়ে জানাল ফরাসি যুদ্ধ বিমান সংস্থা ড্যাসল্ট
সিবিআই ইস্যুতে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মধ্যেই রাফাল চুক্তি বিতর্কে খানিকটা স্বস্তি পেল কেন্দ্র। বিরোধীরা লাগাতার অভিযোগ করছে, রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে। এই ইস্যুতে বিরোধীদের হাতে আরও অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন প্রাক্তন ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওলাদ। সম্প্রতি তিনি বলেছিন, এই চুক্তিতে অনিল আম্বানীর রিলায়েন্স ডিফেন্সের অংশীদারিত্বের বিষয়ে সুপারিশ করেছিল ভারত সরকার, তাই তাঁদের বিকল্প কিছু করার ছিল না।
এরপর, রাফাল চুক্তি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী প্রশান্ত ভুষণসহ তিনজন। বিরোধীদের অভিযোগ, অনিল আম্বানীকে সুবিধে পাইয়ে দিতেই কাজ করেছে মোদী সরকার। এমনকী, অনিল ভার্মা এই চুক্তি নিয়ে তদন্তে এগোচ্ছিলেন বলেই তাঁকে সিবিআই প্রধানের পদ থেকে সরানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।
এই ইস্যুতে এবার কেন্দ্রকে স্বস্তি দিয়ে মুখ খুললেন যুদ্ধ বিমান প্রস্তুতকারী ফরাসি সংস্থা ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিই ও) এরিক ট্র্যাপিয়ার। ইকনমিক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্র্যাপিয়ার জানিয়েছেন, তাঁরা দুর্নীতি বরদাস্ত করেন না। ভারত বা ফ্রান্সের আইন অনুযায়ী যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে তাঁরা প্রস্তুত।
ইকনমিক টাইমস’কে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে এরিক জানিয়েছেন, অনিল আম্বানীকে তিনি চেনেন ২০১২ সাল থেকে। তাঁর কথায়, ২০১১-১২ সাল থেকে রিলায়েন্স ডিফেন্সের সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তা চলছিল। তাই ভারতের বর্তমান সরকারের আমলে তাঁরা রিলায়েন্সের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের কাছে রিলায়েন্সের নাম প্রস্তাব করেছে, এই তথ্য ভুল। পাশাপাশি ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের সিইও’র দাবি, মূল চুক্তির অফসেট ক্লজের আওতায় তাঁদের সঙ্গে রিলায়েন্স ডিফেন্সের ৮৫০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের চুক্তি হয়েছে। রিলায়েন্সের সঙ্গে ড্যাসল্টের ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক চুক্তির যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। তাঁর দাবি, শুধু রিলায়েন্স ডিফেন্স নয়, মূল রাফাল চুক্তির অফসেট ক্লজের আওতায় আরও ৩০ টি সংস্থার সঙ্গেও তাঁদের চুক্তি হয়েছে।
কংগ্রেসের তরফে যে দাবি করা হচ্ছে, তাদের আমলে ফ্রান্সের সঙ্গে ১২৬ টি যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে যে কথা চলছিল, তার তুলনায় মোদী জমানায় করা এই ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি তুলনায় ভারতের পক্ষে অলাভজনক, তাও মানতে চাননি ড্যাসল্ট কর্তা। তাঁর কথায়, আগের সরকারের আমলে ভারত যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে যে দর কষাকষি করছিল, তার তুলনায় এই চুক্তির মাধ্যমে বেশি ফায়দা পেয়েছে ভারত। তাঁর দাবি, ভারত প্রায় ৯ শতাংশ খরচ কমাতে পেরেছে এই চুক্তির মাধ্যমে। ড্যাসল্ট সিইও’র দাবি, যা হয়েছে, তা ভারত-ফ্রান্স দুই দেশের আইন ও চুক্তি মেনেই হয়েছে, তাই দুর্নীতির কোনও জায়গা নেই। তাঁরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না।
ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওলাদে যে দাবি করেছিলেন, রিলায়েন্সের নাম ভারত সরকারের তরফেই ড্যাসল্টের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল, সে বিষয়ে এরিকের দাবি, কোনও ভুল বোঝাবুঝি থেকেই প্রথমে ওই দাবি করেছিলেন প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেণ্ট। তাই পরে তিনি জানান যে, ড্যাসল্ট এবং রিলায়েন্স নিজেরাই পরস্পরকে এই চুক্তির জন্য বেছে নিয়েছে, কোনও সরকারের তরফে হস্তক্ষেপ করা হয়নি।
Comments are closed.