প্রায় ২ হাজার ঋণখেলাপীর নাম প্রকাশ করল দেশের ৪ টি ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্কের পাওনা ৪২ হাজার কোটি টাকা

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঋণখেলাপকারীদের নাম প্রকাশ করতে না চাইলেও, সম্প্রতি দেশের ৪টি ব্যাঙ্ক তাদের প্রায় সমস্ত ঋণখেলাপকারীর নাম প্রকাশ করেছে বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশের ১০ টি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের মধ্যে ৪ টি তাদের ঋণখেলাপকারীদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের নোটিস সত্ত্বেও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিস এখনও পর্যন্ত ঋণখেলাপকারীদের নামের তালিকা প্রকাশে কোনওরকম আগ্রহ দেখায়নি। নভেম্বর মাসের ২ তারিখ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন থেকে নোটিস পাঠানো হয়। সেখানে খুব স্পষ্টভাবেই জানতে চাওয়া হয়, কেন নোটিশ পাঠানোর পরও তারা ঋণখেলাপকারীদের নাম ঘোষণা করছে না? শুধু তাই নয় এব্যাপারে খোদ সুপ্রিম কোর্টও নির্দেশ রয়েছে।
১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে ৪ টি ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ ঋণখেলাপকারীদের পরিচয় ইতিমধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। ওই চারটি ব্যাঙ্ক হল পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা এবং সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক। সর্বমোট ঋণখেলাপকারীর সংখ্যা হল ১,৮১৫, আর তাদের থেকে ব্যাঙ্কগুলির পাওনা অর্থের পরিমাণ হল ৪২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ১,১২৪ জন ঋণখেলাপকারীর নাম প্রকাশ করে দিয়েছিল। যাঁদের কাছে ওই ব্যাঙ্কের মোট পাওনা ২৩,৪৭০ কোটি টাকা। মেহুল চোকসি ও নীরব মোদীর সংস্থারও নাম ছিল ওই তালিকায়। যাঁদের মিলিত ঋণের পরিমাণ ৭,৫০০ কোটি টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিজয় মালিয়ার ৬০০ কোটি টাকা, যতীন মেহতার সংস্থার থেকে ১,৬৪৮ কোটি টাকা এবং কুদোস কেমি লিমিটেড নামের একটি সংস্থার থেকে ব্যাঙ্কের মোট পাওনা ১,৩০২ কোটি টাকা। আইডিবিআইয়ের ঋণখেলাপকারীদের তালিকায় নাম আছে ১৬২ জনের। তাঁদের থেকে ব্যাঙ্কের মোট পাওনা ১১,০৫০ কোটি টাকা। এই তালিকা আইডিবিআই ঘোষণা করে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। ব্যাঙ্ক অব বরোদার ঋণখেলাপকারীদের তালিকায় নাম রয়েছে মোট ৩০৯ জনের। তাঁদের কাছ থেকে ব্যাঙ্কের মোট পাওনার পরিমাণ ৬,২৬১ কোটি টাকা। সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের ঋণখেলাপকারীর সংখ্যা ২২০ জন। এই ব্যাঙ্কের মোট পাওনার পরিমাণ ১,১৫৯ কোটি টাকা।
চলতি বছরের জুলাইতে লোকসভাতে প্রকাশিত একটি তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলিতে মোট ৯,৫০১ জন ঋণখেলাপকারীদের থেকে ব্যাঙ্কগুলির মোট পাওনা হল ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা। ওই তথ্য থেকেই জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে ঋণখেলাপকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ শতাংশ। আর, তাঁদের ঋণ নেওয়া অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০ শতাংশ।

Comments are closed.