দূষণে ঢাকা দিল্লিতে রবিবার টি-২০ ম্যাচ হবে তো? জারি হয়েছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা

দূষণকবলিত দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার ভারত-বাংলাদেশ টি-২০ ম্যাচ কী করে হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। ইতিমধ্যেই দু’দলেরই বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে খবর। সঙ্গে রয়েছে চোখ জ্বালাও। যেভাবে ধোঁয়াও ঢেকে গিয়েছে গোটা দিল্লি, তাতে মাঠে রবিবার দর্শক সমাবেশ কেমন হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় উদ্যোক্তরা। খেলোয়াড়রা নেট প্র্যাকটিস করছেন মুখে মাস্ক লাগিয়ে।
এদিকে দিল্লি প্রশাসন দিল্লি এবং আশপাশ এলাকায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। গত কয়েক বছর ধরেই দিওয়ালির আগে পরে দিল্লিতে ভয়াবহ দূষণ ঘটছে। তবে স্বাস্থ সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা রীতিমতো নজিরবিহীন। শহরের বাসিন্দারা বলছেন, এই ঘোষণা তো আরও আগেই করা উচিত ছিল। একে তো যানবাহনের ধোঁয়া আছেই, তারপর দিওয়ালি উপলক্ষ্যে বাজি পোড়ানোয় পরিবেশ বিষাক্ত হচ্ছে। সর্বোপরি, দিল্লি, হরিয়ানা ও পঞ্জাবে ফসলের নাড়া পোড়ানো অব্যাহত রয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার অনেক চেষ্টা করেও এই নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে পারছে না। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করেই সরকার একদিকে যেমন হেলথ হেজার্ড ইমার্জেন্সি জারি করেছে, তেমনি সমস্ত স্কুলে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, আগামী এক সপ্তাহ সমস্ত নির্মাণকার্যও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে দিল্লিবাসী চূড়ান্ত আতঙ্কে ভুগছেন। বাচ্চাদের ঘরের বাইরে পর্যন্ত যেতে দিচ্ছেন না অনেকেই। বাড়ি থেকে বেরলেই চোখ জ্বলছে, সমানে কাশি হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃহত্তর দিল্লি কার্যত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। নভেম্বরে বাতাসে ঠান্ডার আমেজ আসতে না আসতেই প্রতি বছরের মতো এবারেও দূষণের চাদরে ঢেকে গিয়েছে গোটা রাজধানী। আগাম সতর্কতা ও ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও কেন এমন হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না শহরের বাসিন্দারা। কয়েকদিন ধরে কুয়াশার ফাঁক দিয়ে সূর্যের দেখাই পাচ্ছেন না দিল্লিবাসী।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীপাবলির কয়েক দিন আগে থেকেই প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা,পঞ্জাব, উত্তর প্রদেশে ব্যাপকভাবে ফসলের ‘নাড়া’ (গোড়া) পোড়ানো চলছিল। এ নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যগুলোকে বলেও তেমন লাভ হয়নি। যা নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, তোমরা ‘ক্যাপ্টেন অ্যাঙ্কল’ ও ‘খট্টর আঙ্কল’, অর্থাৎ পঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখো। নাড়া পোড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিওয়ালিতে দিল্লির বাজি পোড়ানোও এই ভয়ঙ্কর বায়ু দূষণের আর একটি কারণ। একটি বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, পঞ্জাব, হরিয়ানার নাড়া পোড়ানোর চেয়ে দিল্লির দূষণ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। শনিবার দুপুরে দিল্লির বায়ুর গুণগত মানের সূচক দাঁড়ায় ৪৮৪-তে। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যে কোনও সুস্থ শ্বাসযন্ত্রও এই দূষণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জার্মান চ্যান্সেলার অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এই মুহূর্তে দিল্লি সফরে রয়েছেন। তিনিও রাজধানীর দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ বান্ধব ইলেকট্রিক বাস চলাচলের উপর জোর দিতে বলেন সরকারকে।

Comments are closed.