ডেনমার্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ফ্রেডেরিকসেন ২৪ বছর বয়সে সাংসদ হন, দেশের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হয়ে চাইলেন বাম ও ডানপন্থীদের সমর্থন

ডেনমার্কের বাসিন্দারা বলেন, তাঁর শরীরে বইছে শ্রমজীবীর রক্ত। আর বাবা বলছেন, ছোটবেলা থেকেই মেয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে ব্যাকুল, রাজনীতিই ধ্যান জ্ঞান। আর তাঁর অনুগামীরা বলছেন, ২০১৫ সাল থেকে মাটি কামড়ে লড়াই শেষ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দিল। তিনি ডেনমার্কের নতুন প্রধানমন্ত্রী ম্যাট ফ্রেডেরিকসেন। সে দেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠও বটে।
গত বুধবারই বামপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে অতি দক্ষিণপন্থী ড্যানিশ পিপলস পার্টিকে ধরাশায়ী করে দেশের ক্ষমতা দখল করেছেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেত্রী ফ্রেডেরিকসেন। এবার আরও কঠিন পরীক্ষা। মূলত যে দুটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতার মসনদে পৌঁছলেন ম্যাট ফ্রেডেরিকসেন, তা হল, প্রথমত, ডেনমার্কের কল্যাণকর রাষ্ট্রের ভূমিকা আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয় তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ। মূলত বামপন্থী বিচারধারার সঙ্গে শরণার্থী সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার অতি দক্ষিণপন্থী প্রতিশ্রুতিতেই বাজিমাত করেছেন বছর ৪১ এর ম্যাট। আপাতভাবে দুই মেরুতে থাকা রাজনৈতিক লাইনকে মিশিয়ে এক নতুন রাজনীতির দিশা দিয়েছেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেত্রী। যাঁর দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধছে গোটা ইউরোপ।
১৯৭৭ সালের ১৯ শে নভেম্বর ডেনমার্কের আলবোর্গে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাট ফ্রেডেরিকসেন। বাবা ফ্লেমিং ফ্রেডেরিকসেন পেশায় টাইপিস্ট হলেও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ধারার রাজনীতিতে ডেনমার্কে একটি পরিচিত নাম। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ২০০০ সালে আলবোর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল সায়েন্স এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ম্যাট। তারপর পূর্ণ সময়ের রাজনীতিতে প্রবেশ। ২৪ বছর বয়সে ম্যাট ডেনমার্কের সংসদের (ফোকেটিং) সদস্য নির্বাচিত হন। ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির দায়িত্বভার গ্রহণের আগে পালন করেছেন দেশের জাস্টিস এবং এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টারের দায়িত্ব। পার্টিতেও অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন ম্যাট। দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একসঙ্গে এক টেবিলে বসানোর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ম্যাট ফ্রেডেরিকসেনের, বলছেন পার্টির প্রবীণ নেতা জার্নে লুস্টসেন।
তবে ম্যাটের রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়। সরকারি স্কুল এবং সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ঘোর সমর্থক ম্যাট ফ্রেডেরিকসেন নিজের দুই সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন বেসরকারি পাবলিক স্কুলে। যা নিয়ে ডেনমার্কজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চাপের মুখে তাঁকে বিবৃতি দিতে হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, এই স্ববিরোধিতাই ম্যাটের চরিত্রের অন্যতম দিক। ঠিক যেমন নির্বাচনে জিতে উঠেই তিনি বলেছিলেন, সংখ্যালঘু সরকার চালাতে চাই। বাম কিংবা ডান, ইস্যুভিত্তিক সমর্থন চাইব। এভাবেই চলবে সরকার। বাস্তবে এই ফর্মুলা কতটা কার্যকর হবে তা অবশ্য নির্ভর করছে, নতুন সরকারের কর্মপদ্ধতির উপর।

Comments are closed.