ডেনমার্কে অতি দক্ষিণপন্থীদের বিপর্যয়, ক্ষমতায় বামপন্থী-সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা, প্রধানমন্ত্রী ম্যাট ফ্রেডেরিকসেন

ডেনমার্কে উলট পূরাণ। ভোটে ভরাডুবি অতি দক্ষিণপন্থীদের, বিশাল ব্যবধানে জয় বামপন্থী এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের। নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে, মধ্য ও বামপন্থী দলগুলোর জোট পেয়েছে ৫২.১ শতাংশ ভোট, অন্যদিকে ৪১ শতাংশেই আটকে গিয়েছে দক্ষিণপন্থীরা। ডেনমার্কের নির্বাচনের তাৎপর্যপূর্ণ ফলে একটা জিনিস পরিষ্কার, বামপন্থী ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোট বেধে বিশাল জয় প্রভাব ফেলবে গোটা ইউরোপের রাজনীতিতে।
বুধবার ডেনমার্কে নির্বাচনের ফল ঘোষণার একেবারে শেষ লগ্নে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেত্রী ম্যাট ফ্রেডেরিকসেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে জানিয়েছেন, মানবতাই তাঁদের নীতি, জনকল্যাণকর ডেনমার্ককে ফিরিয়ে আনাই মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি, শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতির কথাও জানিয়েছেন ফ্রেডেরিকসেন। ডেনমার্কের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় অতি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল ড্যানিশ পিপলস পার্টি বা ডিপিপি, শরণার্থী এবং আশ্রয় প্রার্থীদের নিয়ে চরম অবস্থান নিয়েছিল। যদিও সদ্য নির্বাচনে জয়লাভ করে সেই অবস্থান থেকে সরার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া গেল না ফ্রেডেরিকসেনের গলায়। ইউরোপজুড়ে চর্চা, আসলে ডিপিপিকে তাঁর অস্ত্রেই মাত দিলেন ফ্রেডেরিকসেন।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, শুরুতে অতি দক্ষিণপন্থী ডিপিপির রাজনৈতিক লাইন শ্রমজীবী মানুষের কথাও বলতো। আবার শ্রমজীবী মানুষ ঐতিহাসিকভাবে বামপন্থীদের সঙ্গেই থাকতে পছন্দ করেন। শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রাখতে গিয়ে মধ্যবিত্তের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা পায় ডিপিপি। পাশাপাশি চলতে থাকে, আগ্রাসী রাজনীতির চর্চা। যা তথাকথিত ড্যানিশ মডেলের পরিপন্থী বলে মনে করা হচ্ছিল। মূলত এই আগ্রাসী রাজনীতির জন্যই বামপন্থী এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সামনে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে প্রবল প্রতাপশালী ডিপিপি। একেবারে শেষ লগ্নে হাওয়া আঁচ করতে পেরে ডিপিপি তাদের স্লোগানে বদল এনেছিল। ইস্যু ভিত্তিক স্লোগান বদলে হয়ে গিয়েছিল, ‘এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় নয়’। কিন্তু ভোটারদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য ঠেকেনি। আর তাই নিজের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে স্লোগান বদলালেও, সেই ভোটাররা যে ডিপিপির সঙ্গে নেই, নির্বাচনের ফলেই তা পরিষ্কার। পরিস্থিতি এমনই যে গতবারের জেতা আসনের অর্ধেকও ধরে রাখতে পারছে না ডিপিপি। মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই এবার বাজিমাত করল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা।
মূলত শ্রমজীবী-মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাতারাতি মাথা থেকে হাত তুলে নেওয়ায় ভোটের লড়াইয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে ডিপিপি, এমনটাই ব্যাখ্যা পর্যবেক্ষকদের। তাদের আরও দাবি, চিরাচরিতভাবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বা বামপন্থীদের ভোটব্যাঙ্ক বলে চিহ্নিত এই শ্রেণির মানুষরা কিছুদিন ডিপিপির সঙ্গে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু এবার ভোটের আগে তারা আবার ‘ঘরে’ ফিরেছেন। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ঘর ওয়াপসির মূল মন্ত্র ছিল কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে ডেনমার্ককে ফের তুলে ধরা এবং পেনশন সহ সমস্ত রকম সামাজিক নিরাপত্তা দেশে ফের লাগু করা। যে প্রশ্নের কোনও উত্তর অতি দক্ষিণপন্থী ডিপিপির কাছে ছিল না। আর এতে বিরাট নির্বাচনী ক্ষতির মুখে পড়েছে একদা ক্ষমতাসীন ড্যানিশ পিপলস পার্টি।
ভোটের ফল বলছে ডেনমার্কে মধ্যপন্থী এবং বামপন্থীরা জয়লাভ করেছে। এবার প্রশ্ন, ডেনমার্কে নির্বাচনের ফল ইউরোপের রাজনীতিতে ঠিক কী প্রভাব ফেলতে চলেছে? ব্রেক্সিট থেকে জার্মানিতে বিক্ষোভ, ফ্রান্স, স্পেনে অশান্তি, গ্রিসে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বর্তমানে ইউরোপজুড়ে তীব্র সঙ্কট। এই প্রেক্ষিতে ডেনমার্কের মতো ছোট কিন্তু উন্নত অর্থনীতিতে বামপন্থী এবং সমমনোভাবাপন্নদের বিশাল জয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments are closed.