গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে দেশ, ঠিক এই ভাষাতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে রাজ্যসভায় কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। বুধবার তিনি মোদী সরকারের সঙ্গে জার্মানির হিটলারি শাসনের তুলনা টানেন। ডেরেক নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেন।
সোমবার মধ্যরাতে এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের পর বুধবার তা রাজ্যসভায় পেশ হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতেই বিলের তীব্র বিরোধিতা করে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক অভিযোগ করেন, অসমে এনআরসি-তে যে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে তার ৬০ শতাংশই বাঙালি হিন্দু। তৃণমূল সাংসদ বলেন, এ থেকে পরিষ্কার যে, জাতিগত এবং ভাষাগতভাবেও আক্রমণ করা হচ্ছে বাঙালিকে। তাই কোনওভাবেই বাংলায় এনআরসি হতে দেব না আমরা। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বাঙালি বিরোধী।
ডেরেকের কথায়, যে বিল পেশ হল তার সঙ্গে নাৎসি জার্মানির মিল রয়েছে। ১৯৩৩ সালে জার্মানিতেও ছিল ডিটেনশন ক্যাম্প। আর ২০১৮ সালে অসমে ৬০ শতাংশ বাঙালি হিন্দু আজ বন্দিদশায় জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৩৫ সালে জার্মানিতে নাগরিকত্ব বিল করে ‘জার্মান রক্ত’কে রক্ষা করা হয়েছিল। আর আজ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিলের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হচ্ছে, কারা আসল ভারতীয় নাগরিক! ১৯৪০ সালে মাদাগাস্কর পরিকল্পনায় ইহুদিদের বিতাড়ন করা হয়েছিল। আজ ভারতে এনআরসির নামেও নাগরিকদের তাড়াতে সেই নীতি নেওয়া হয়েছে।
মোদী ও অমিত শাহকে বিঁধে তৃণমূল সাংসদ বলেন, জার্মানিতে নাৎসিরা তখন ইহুদিদের ‘ইঁদুর’ বলে তীব্র অপমান করত। ঠিক তেমনই ভারতে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কখনও ‘উইপোকা’, ‘আরশোলা’ শব্দের প্রয়োগ করছেন। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে এক জনসভায় অমিত শাহ মন্তব্য করেছিলেন, এ দেশে কোটি কোটি অনুপ্রবেশকারী পোকার মতো ঢুকেছে।
বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল,আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি। বিরোধীদের অভিযোগ, একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এই বিল আনা হয়েছে। যা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে।