নভেম্বর ২০১০, দীপক সরকার আমাকে বললেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এবং পার্টির সঙ্গে কথা হয়েছে, খেজুরি-নন্দীগ্রামের ঘরছাড়াদের এলাকায় ফেরাতে হবে’

আগের কয়েকটি পর্বে উল্লেখ করেছি, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএমকে দুর্বল করার জন্য মাওবাদীরা জঙ্গলমহলে কীভাবে ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল আমাদের কর্মী, সমর্থকদের ওপর। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতা, শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হানা, সিপিএম কর্মী, সমর্থকদের খুন-একেবারে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছিল মাওবাদীরা। প্রশাসনও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
পুরো জঙ্গলমহলেই যখন এমন আতঙ্কের পরিবেশ, তারই মধ্যে ২০১০ সালের ২০ শে অক্টোবর, ঝাড়গ্রাম মহকুমার অন্তর্গত, সাঁকরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অতীন্দ্রনাথ দত্তকে মাওবাদীরা সকালবেলাতেই থানা থেকে অপহরণ করে নিয়ে চলে যায়। থানার বাকি পুলিশ কর্মচারীরা হতভম্ব, নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁদের ওসিকে রক্ষা করার জন্য একজন পুলিশকর্মীও আহত হলেন না। এক রাউন্ড গুলিও চলল না! এ হয় কী করে? ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্য তথা দেশজুড়ে হইহই করে প্রচার শুরু হয়ে গেল, পলিশের ওসি’রাও আজ আর থানায় নিরাপদ নন। মাওবাদীরা যেখানে থানা থেকেই ওসি’কে দিনেরবেলা অপহরণ করে নিয়ে চলে যাচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এই রাজ্যে এরূপ ঘটনা নজিরবিহীন। মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ বা ঝাড়খন্ডের মতো রাজ্যে এরূপ ঘটনা ঘটলেও, এরাজ্যে এরকম ঘটনার কোনও নজির ছিল না। জঙ্গলমহলের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ওই সব এলাকার পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের মধ্যে এই ঘটনা এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করল। মানুষের মধ্যে এক চরম নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ। মাওবাদীরাও অতীতে আমাদের রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পায়নি, এখন তা পেল কী করে?
পূর্বেই উল্লেখ করেছি, প্রশাসনের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত একটা অংশের মদতও সেই সময় বিরোধীরা পাচ্ছিল। যাই হোক, এই অপহরণকে কেন্দ্র করে টানটান উত্তেজনার রহস্যজনক অধ্যায় শেষে সাঁকরাইল থানার ওসিকে মাওবাদীরা মুক্তি দেয়। এই মুক্তির জন্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করেছিলেন, কাকেই বা মধ্যস্থতাকারী মেনেছিলেন, তা ছিল প্রশাসনের উচ্চস্তরের আভ্যন্তরীন বিষয়। তা কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। সাধারণ মানুষের এসব নিয়ে কোনও মাথাব্যাথাও কখনও ছিল না। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বা যাঁরা পুলিশ-প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন, তাঁরা কি একবারের জন্যও নিজেদের আত্মসমীক্ষা করেছিলেন?
পুলিশ-প্রশাসন পরিচালনার সার্বিক ব্যর্থতার কারণে রাজ্যজুড়ে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে, মানুষের ক্ষোভ প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, এক কথায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, না এর জন্য কোনও আত্মসমীক্ষা করা হয়নি। আসলে একটা প্রচলিত বাক্য আছে, ‘রাজা কখনও ভুল করতে পারেন না’-অনেকটা এরকমই। আর এক্ষেত্রে সরকার পরিচালনার মুখ্য রাজনৈতিক দলের সংগঠনের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তাও কি যথাযথভাবে হচ্ছিল? না, তাও হয়নি। পার্টি সংগঠন যখন সরকারের লেজুড়ে পরিণত হয়ে যায়, তখন এরকমই হয়। না হলে কবেই পুলিশ দফতরের দায়িত্ব পরিবর্তন করে অন্য অনেক যোগ্য ব্যক্তি ছিল, তাঁদের হাতে দেওয়া যেত। তাহলে এরকম অবস্থা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হোত। আসলে দলের রাজ্য সংগঠনেও তখন দৃঢ়তার চরম অভাব।
যোগ্য লোক থাকলে কী হবে, নেতাদের পছন্দের হতে হবে তো! তা না হলে যে যোগ্যতা মূল্যহীন। পুলিশ নিয়ে যখন মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ, এলাকার মানুষ থানায় ডেপুটেশন দিতে চাইছে, তখন পার্টিগতভাবে উপর থেকে নির্দেশ জারি করা হল, পুলিশের বিরুদ্ধে ডেপুটেশন দেওয়া যাবে না। তাতে নাকি রাজ্য সরকারের, বিশেষ করে পুলিশমন্ত্রীর বদনাম হবে। এ নিয়ে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করার সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই পুলিশের অন্যায় দেখলেও প্রতিবাদের রাস্তা বন্ধ। যখন এর অনেক পূর্বেই পার্টির অভ্যন্তরে পুলিশের কাজ এবং পুলিশ দফতর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বিশেষ করে জেলা কমিটির সভায় (২০০৮ সালে) দলের রাজ্য সম্পাদকের উপস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, এরা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট কিনা, তখন পার্টির মধ্যে এনিয়ে আত্মসমীক্ষা একান্তভাবে জরুরি ছিল। কিন্তু পুলিশ এবং এই দফতরের ভূমিকা নিয়ে পার্টিতে যে উপেক্ষার মনোভাব তা আত্মঘাতী অবস্থান ছাড়া আর কীই বা হতে পারে?
সাঁকরাইল থানার ওসি অপহরণের প্রায় এক মাস পরের আরও একটি বড় ঘটনা, যে ঘটনা একাধারে খুবই কঠিন ও সম্ভবনাময় ছিল, তা এখনও অপ্রকাশিত কাহিনী হিসাবেই রয়ে গেছে। এই ঘটনা নিয়ে পার্টির অভ্যন্তরে যে আলোচনা ও পর্যালোচনা একান্তভাবে হওয়া প্রয়োজন ছিল, তা হয়েছিল কীনা আমার অন্তত জানা নেই। ঘটনাটি মূলত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার। এই ঘটনার বিবরণ লেখার মধ্যে সঠিকভাবে নিয়ে আসা খুবই কঠিন কাজ। তবু চেষ্টা করব ঘটনার উপর আলোকপাত করতে। যাতে যাঁরা বামপন্থার আদর্শে বিশ্বাসী, তাঁদের অবগতির মধ্যে নিয়ে আসা যায়।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সূচনা থেকে পর্যায়ক্রমে যে সব ঘটনা ঘটেছে, আমার লেখার পূর্ব অংশে তা খুব সামান্যই উল্লেখিত আছে। নন্দীগ্রাম নিয়ে অনেক লেখাই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং অনেক বিষয় আদালতের বিচারাধীন। তাই এই লেখার মধ্যে নন্দীগ্রামের ঘটনা যতটা উল্লেখ করতে পারলে হয়তো সুবিধা হোত, আরও সুচিন্তিত মতামত পাঠকদের কাছে হাজির করা যেত, তার সবটা উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণভাবে কিছু কথা আমি পাঠকদের কাছে উল্লেখ করেছি। ২০০৭ সালের পরে বিশেষ করে নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে পর্যায়ক্রমে আমাদের নেতা, কর্মীরা ঘর ছাড়া হচ্ছিলেন। মাঝে পার্টিগতভাবে তাঁদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা হলেও তা
ফলপ্রসু হয়নি। নন্দীগ্রাম ও খেজুরি থানা এলাকার অনেক নেতা, পার্টি সদস্য এলাকাছাড়া হয়ে যান। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর বিরোধী তৎপরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মীদের ঘরছাড়া হওয়ার সংখ্যাটা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িছাড়া থাকার ফলে আমাদের কমরেডরা মানসিকভাবে আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। লোকসভা নির্বাচনের পর আমাদের পার্টির প্রতি পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাও এলাকায় নেতিবাচক হতে থাকে। এলাকার বাইরে, জেলার বাইরে থাকা বাড়িছাড়া নেতা, কর্মীরা বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। জেলা পার্টি ও রাজ্য পার্টির উপরও তাঁরা ক্ষোভ জানান। চাপ তৈরি করতে থাকেন যে, ‘আমরা সরকারে আছি, রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন আমাদের পরিচালনাধীন, তা সত্বেও কেন দীর্ঘদিন আমাদের পরিবারছাড়া, ঘরছাড়া হয়ে থাকতে হবে? এই ব্যাপারে কি পার্টি নেতৃত্ব বা সরকার যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের কোনও দায় নেই?’ বাড়িছাড়া কমরেডদের পরিবারবর্গও সংশ্লিষ্ট জেলা পার্টির উপর চাপ তৈরি করে। বাধ্য হয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পার্টি ঘরছাড়াদের বাড়ি ফেরানোর বিষয়ে রাজ্য পার্টি ও রাজ্য প্রশাসনে সঙ্গে আলোচনা করে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি, নন্দীগ্রামের ঘরছাড়া কয়েকশো কমরেড পশ্চিম মেদিনীপুর পার্টির ব্যবস্থাপনায় থাকছিলেন। তাঁরাও বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। খেজুরি, নন্দীগ্রামের ঘরছাড়াদের এলাকায় ফেরানোর জন্য পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএম নেতৃত্ব ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের একটি তারিখ নির্দিষ্ট করেন। সিদ্ধান্ত হয়, বাড়ি ফেরার সময় যাতে বিরোধী রাজনৈতিক দল তাঁদের পুণরায় আক্রমণ না করে, পুলিশ, প্রশাসন সে ব্যাপারে সাহায্য করবে। দীর্ঘদিন ঘরছাড়া কমরেডরা সংগঠিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েই ফিরবেন। এরপর যত বাধাই আসুক, তাঁরা পিছু হঠবেন না। প্রয়োজনে শহিদের মৃত্যু বরণ করবেন। খেজুরি-নন্দীগ্রামের বাড়িছাড়া কমরেডদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে রাজ্য পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে যে আলোচনা হয়, সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পার্টি সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা করে সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে কমরেডদের বাড়ি ফেরার যে তারিখ ঠিক হয়, তা নেতৃত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্দিষ্ট তারিখ আগে বাইরে প্রকাশ হলে বিরোধীরা তৎপর হয়ে উঠতে পারে। সেজন্যই গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজন হয়।
রাজ্য পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তৎকালীন পার্টি সম্পাদক কমরেড দীপক সরকার আমাকে ডেকে পাঠান। এবং এই সিদ্ধান্তের কথা আমাকে জানান। বলেন, ‘পূর্ব মেদিনীপুরের বাড়িছাড়া কমরেডরা এলাকায় ফিরবেন। সেই জন্য তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে যেটুকু সাহায্য প্রয়োজন তা আমাদের করতে হবে। রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তাঁদের যতটুকু সাহায্য প্রয়োজন হবে, তাঁরা তা করবেন।’ জেলা সম্পাদক আমাকে একথা বলার পর আমি আপত্তি জানাই। আমি সরাসরি জেলা সম্পাদক দীপক সরকারকে বলি, পুলিশের যে ভূমিকা বিভিন্ন ঘটনায় প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, এরপরেও পুলিশ ঘরছাড়াদের বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবে, একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বলি, পুলিশ সাহায্য করার পরিবর্তে দেখবেন বিরোধিতা করবে ও তাতে সমস্যা আরও বাড়বে।
তখন জেলা সম্পাদক আমাকে বলেন, ‘নির্দিষ্টভাবে আমার সঙ্গে পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে, কোনও অসুবিধা হবে না। বাড়িছাড়ারা যখন দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরবেন তখন পুলিশ তাঁদের সাহায্যই করবে। কোনও অসুবিধা হবে না।’ আরও বলেন, ‘ওই দিন পুলিশের কাজ নিয়ে বিশেষভাবে পার্টির এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘরছাড়াদের ব্যাপারে পুলিশ যাতে সদর্থক ভূমিকা নেয়,তা তিনি দেখবেন।’ জেলা সম্পাদকের এসব কথার পরও আমার মন সায় দিচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, পুলিশের যা অবস্থা দেখছি, তাতে ঘরছাড়ারা বাড়ি ফিরতে গিয়ে নতুন কোনও সমস্যায় না জড়িয়ে পড়েন!
দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকার ফলে খেজুরি, নন্দীগ্রামের কমরেডরা এতটাই উদগ্রীব ও দৃঢ় হয়েছিলেন যে, তাঁরা বাড়ি ফিরবেনই। কোনও বাধাই তাঁদের আটকে রাখতে পারবে না। যে বাধাই আসুক তাঁরা তা অতিক্রম করবেন। খেজুরির এক কমরেড, যিনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য, তিনিও বাড়ি ফেরার জন্য আকুল। রাজ্য পর্যায়ের এত আলোচনা, জেলা সম্পাদকের কথা সত্বেও আমার মন কিন্তু তখনও ব্যক্তিগতভাবে এই প্রস্তাবে সায় দিচ্ছিল না। আশঙ্কা করছিলাম, নতুন কোনও জটিলতা যদি আবার সৃষ্টি হয়। কিন্তু একদিকে পার্টির সিদ্ধান্ত, অন্যদিকে বাড়ি ছাড়া কমরেডদের বাড়ি ফেরার আকুলতা।
খেজুরি, নন্দীগ্রামের এই বাড়িছাড়াদের মধ্যে পার্টির পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা কমিটির সদস্যরাও ছিলেন। তাঁরা বললেন, ‘যদি প্রশাসন বিরোধীদের সাহায্য না করে, তাহলে আমরা ঠিক বাড়ি ফিরতে পারব।’ পার্টির সামগ্রিক সিদ্ধান্তের শরিক হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদকের অনুরোধে খেজুরি, নন্দীগ্রামের বাড়িছাড়াদের এলাকায় ফেরানোর সিদ্ধান্তে সহমত জানিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আমি বিরোধিতা করলেও যখন জেলা ও রাজ্যগতভাবে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, তখন আমার বিরোধিতা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তখনই কথা হয়, যখন ওঁরা ফিরবেন, সেদিন সব খবরাখবর যাতে পাওয়া যায়, সেদিন প্রশাসনের ভূমিকাও বা কীরকম থাকে এটা বুঝে নেওয়ার জন্য এই ধরনের ঘটনায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কমরেডকে ওঁদের সঙ্গে পাঠাতে হবে। খেজুরি, নন্দীগ্রামের ঘরছাড়া কমরেডদের অনুরোধে পশ্চিম মেদিনীপুরের একজনকে তাঁদের সাথে পাঠানোর এই প্রস্তাবে সম্মত হই। সেই মতো আমাদের জেলার কমরেড প্রভাকর (নাম পরিবর্তিত) সেদিন ঘরছাড়াদের সঙ্গে তাঁদের এলাকায় ফেরার কর্মসূচিতে শামিল হন। তার আগের দিন রাতে ওই কমরেডের দাদার আকস্মিক মৃত্যু হয়। কিন্তু পার্টির নির্দেশের প্রতি কমরেড প্রভাকরের এতটাই আনুগত্য ছিল যে, তিনি শ্মশানে দাদার সৎকার কাজ করে এসেই ওই কর্মসূচিতে যোগ দেন। তার পরবর্তী ঘটনা আমার পরের পর্বের লেখার মধ্যে বিস্তারিত উল্লেখ করব। ওই কমরেড যদি না থাকতেন, তাহলে সমস্যা অনেক জটিলতর আকার নিতে পারত সেদিন। অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতিও হতে পারত। এই ধরনের কমরেডরা পার্টির নির্দেশ পালন করার ক্ষেত্রে যে বিরল দৃষ্টান্তের অধিকারী তা ভাবতে যেমন গর্ব হয়, তেমনই আবার এই কমরেডরা এত বছর পরেও পার্টির মধ্যে প্রাপ্য সম্মান না পাওয়ায় মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়। কমরেড প্রভাকর শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি বিশেষ এলাকায় পার্টি সংগঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন, কিন্তু আনুগত্য যেহেতু আদর্শের প্রতি, তাই তাঁর প্রতি কোনও বঞ্চনাই তাঁকে তাঁর কর্তব্য থেকে সরিয়ে দিতে পারেনি।
নির্দিষ্ট দিনে কমরেড প্রভাকর খেজুরি, নন্দীগ্রামের ঘরছাড়াদের নিয়ে রওনা দিলেন, কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি, কী কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি আমরা।

ঘরছাড়াদের ফেরানোর দিন কী ঘটল খেজুরিতে, সেই অজানা কাহিনী আগামী শুক্রবার

(চলবে)

Comments are closed.