বিহারে মহামারীর চেহারা নেওয়া এনসেফ্যালাইটিস ছড়াচ্ছে ছত্তিসগঢ়ে, মৃত্যু প্রায় ১৫০ শিশুর

বিহারে ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম। থামানো যাচ্ছে না শিশুদের মৃত্যু মিছিল। বৃহস্পতিবার বিহার সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, পয়লা জুন থেকে রাজ্যের ১৬ টি জেলায় ৬২৬ শিশু এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত। সরকারিভাবে মৃত্যু হয়েছে ১৩৬ শিশুর।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিহারের মুজফফরপুর জেলার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১১৭ টি শিশুর। এছাড়াও ভাগলপুর, পূর্ব চম্পারণ, বৈশালি, সীতামারি এবং সমস্তিপুর জেলাতেও থাবা বসিয়েছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম। এই জায়গাগুলো থেকেও প্রতিদিনই শিশু মৃত্যুর খবর আসছে। আশঙ্কা বাড়িয়ে এবার বিহারের সীমানা ছাড়িয়ে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছে ছত্তিসগঢ়ের ৩ শিশু। তাদের মধ্যে একটি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। সূত্রের খবর, ছত্তিসগঢ়ের জগদালপুর জেলার ৩ শিশুকে বস্তার এলাকায় ডিমরাপাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
২০১৪ সালের পর বিহারে আবার এমন ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম। গত রবিবার মুজফফরপুরে পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। ২০১৪ সালেও একই কারণে শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রথম মোদী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিত্ব পেয়ে ফের গেলেন এবং করলেন ২০১৪ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটে। এদিকে দু’দিন আগেই শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ ঘুরে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। বিহার সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেলে বেসরকারি নার্সিংহোমে শিশুদের ভর্তি করার কথা। খরচ দেবে রাজ্য সরকার।
বিহার সরকারের তরফে সরকারি হাসপাতালে চাকরি না করা ডাক্তারদের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা যেন রোগী দেখায় অন্যান্য ডাক্তারদের সহায়তা করেন এবং জায়গা বিশেষে স্বাস্থ্য ক্যাম্প করেন। এই অবস্থায় বিহারের এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত জেলাগুলোতে ঘুরে ঘুরে ক্যাম্প চালাচ্ছেন ডাক্তার কাফিল খান। বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধও বিলি করছে কাফিল খানের তৈরি করা চিকিৎসক দল।
কিন্তু কেন প্রতি বছর শিশুদের এমন ভয়াবহ মৃত্যু মিছিল চলবে! সমস্যা কি কেবল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয়, নাকি অন্য কোথাও? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং সীমাহীন দারিদ্র, এই দুই যুগলবন্দিতেই এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম। মূলত অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা কাঁচা লিচু খেলে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, কাঁচা লিচুতে এক ধরনের বিষ থাকে, যা পেটে গেলে অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে হাইপোগ্লাইসিমিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

Comments are closed.