ব্যালটে ভোট হলে পশ্চিমবঙ্গের ফল বদলে যেত, ইভিএমে কারচুপি সম্ভব এই বিশ্বাস ভোটের ফলে দৃঢ় হয়েছেঃ অমিত সেনগুপ্ত

রোহিত ভেমুলা পর্বে তিনি মুখ খুলেছিলেন ছাত্রদের হয়ে। কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদদের সমর্থনে জেএনইউতে গিয়ে ভাষণও দিয়েছিলেন। অভিযোগ, তারপরেই মোদী সরকারের রোষানলে পড়তে হয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশনের অধ্যাপক সাংবাদিক অমিত সেনগুপ্তকে। ২০১৬ সালের মার্চে রাতারাতি তাঁকে দিল্লি থেকে ঢেঙ্কানলে বদলির নির্দেশ জারি হয়। প্রতিবাদে আইআইএমসির অধ্যাপক পদ ছেড়ে দেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সংসদ সভাপতি তথা সাংবাদিক অমিত সেনগুপ্ত। ভোটের বহু আগে থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছেন তিনি। তাঁর দাবি, ভোটের ফলের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনও মিল নেই।

প্রশ্নঃ ভোটের বহু আগে থেকেই আপনি ইভিএমের বিরোধিতায় সরব। রেজাল্টের পর প্রশ্ন তুলেছেন ফলের সত্যতা নিয়ে। ইভিএম নিয়ে আপনার আপত্তির মূল জায়গাটা কি?
অমিত সেনগুপ্তঃ প্রথমেই বলে দিই, ইভিএম নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সন্দেহের কারণ, গ্রাউন্ড রিয়্যালিটির সঙ্গে ভোটের ফলের কোনও মিল না থাকা। ভোটের সময় কিংবা তার আগে, যে সমস্ত সাংবাদিক বা আমলা বা সরকারি কর্মীরা গ্রামে-গঞ্জে সফর করেছেন, তাঁরাও এই ফল দেখে চমকে উঠছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁদের দেখা বাস্তবের কোনও প্রতিফলনই হয়নি ভোটের ফলে। এটা কী করে সম্ভব? একসাথে সবাই কী করে ভুল অনুমান করতে পারেন!
প্রশ্নঃ সুপ্রিম কোর্ট ভিভিপ্যাট নিয়ে বিরোধীদের দাবি নাকচ করেছে। কমিশন বলছে, ইভিএমে কারচুপি সম্ভব নয়। তাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ, ইভিএম হ্যাক করে দেখানোর। এরপরও আপনি কেন ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?
অমিত সেনগুপ্তঃ ইদানিং বিভিন্ন জায়গা থেকে ভূতুড়ে ভোটারের কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় ভোটদাতার সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে ভোটের হার। ইভিএম ভরা প্রাইভেট নম্বরের গাড়ি-ট্রাক আটক হয়েছে ফলাফলের ঠিক আগের দিনও। মহারাষ্ট্রে প্রায় ৪০ লক্ষ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। বাদ যাওয়া মানুষদের মধ্যে ১৭ লক্ষ দলিত এবং ১০ লক্ষ মুসলিম। এই মানুষরা কি বিজেপিকে ভোট দিতেন? এবার এই মানুষগুলোর নাম কেন বাদ গেল তা খুঁজে দেখতে গেলেই পাওয়া যাবে এর পিছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। ভুল করে এটা হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন এবার ভোটে যে ভূমিকা পালন করেছে, তাতে এই সন্দেহ আরও দৃঢ় হচ্ছে। যাবতীয় সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশনের অত্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত। না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি নিজেও বিশ্বাস করতে চাই, ইভিএমে কোনওরকম কারচুপি সম্ভব নয়, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তা বিশ্বাস করতে দিচ্ছে না।
প্রশ্নঃ এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কেমন দেখছেন?
অমিত সেনগুপ্তঃ ইভিএম নিয়ে সব বিরোধীরা একজোট হতে পারেনি ঠিকই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্ন ওঠা কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম প্রশ্ন তুলেছেন ইভিএম নিয়ে। উনি কিন্তু এখনও নিজের অবস্থানেই অনড়। বাকিরাও আস্তে আস্তে মুখ খুলছেন এই ইস্যুতে। দেশের বিশেষ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটের ফল এমনই অদ্ভুত, যে না চাইলেও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে গো বলয়ে বিজেপির ফল দেখলে ব্যাপারটা সত্যিই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কোন জাদুবলে বিজেপির পক্ষে এত ভোট পড়ছে, তা জানতেই হবে।
প্রশ্নঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যালটে ফেরার দাবি জানিয়েছেন। আরও অনেকে একই কথা বলছেন। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে প্রযুক্তিকে অগ্রাহ্য করা বোকামো হয়ে যাবে না তো, আপনার কী মত?
অমিত সেনগুপ্তঃ প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে। কিন্তু সেই প্রযুক্তি যে একশো শতাংশ নিরাপদ তা নিশ্চিত হওয়ার আগে কীভাবে প্রযুক্তিকে আপন করে নেবেন? আগে ইভিএম নিয়ে সন্দেহের বাতাবরণ দূর হোক। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমত। যতদিন না ইভিএম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, ভোট হোক ব্যালটে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আশঙ্কা হচ্ছে, ইভিএমে ভোট স্বচ্ছতার পরিপন্থী। সিনিয়র বুশের নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছিল, তারপর থেকেই ব্যালটে সমর্থন বেড়েছে প্রথম বিশ্বের। আর সবচেয়ে বড় কথা, মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে দেখা গিয়েছে, কীভাবে মগজ কেনার কারবার শুরু হয়ে গিয়েছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা তো প্রাথমিকভাবে মগজ কেনার কাজই করছিল। তাহলে এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোটকে মেশিনের মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা হতে পারে, এমন অভিযোগ উঠলে, তা কি উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয়? আমার ধারণা, ব্যালটে ভোট হলে কানহাইয়া, আতিশিদের ফল অন্যরকম হত, পশ্চিমবঙ্গের ফলও বদলে যেত।

Comments are closed.