পাহাড়ে জাঁকিয়ে বসছেন গুরুং! নেপালি ভোট কতটা পাল্টাতে পারে উত্তরবঙ্গের সমীকরণ?

সাড়ে ৩ বছর পর দার্জিলিঙে ফিরেছেন বিমল গুরুং। আর পাহাড়ে ফিরেই নতুন করে সংগঠন সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। এতদিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা বিমলপন্থীদের পার্টি অফিসে ঝাড়পোছ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পাতলেবাসের পার্টি অফিসে বসেছিলেন বিমল গুরুং। কয়েকদিনের মধ্যেই সিংমারির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে পার্টি পরিচালনার কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন মোর্চা নেতারা।

তাহলে কি পাহাড়ে ফের দাপট ফিরে পেলেন বিমল গুরুং? পাহাড়ের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতরা বলছেন এটা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। গুরুত্বের বিচারে পাহাড়ে বিমল গুরুং এক নম্বরে। অনিত থাপা বা বিনয় তামাংরা কোনোভাবেই বিমল, রোশন গিরির জায়গায় নিতে পারেননি, তা স্পষ্ট। সেই বিমল গুরুং এবার তৃণমূলের পাশে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় মোট ১৮ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বেশিরভাগ আসনেই হার জিত নির্ধারণ করার মতো জায়গায় রয়েছেন বিমল গুরুং। ফলে লোকসভায় উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের শোচনীয় ফল বদলে যেতে পারে দুর্দান্ত সাফল্যে! 

বিগত নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, বিমল গুরুং যে দলকে সমর্থন করেন সেই দল ভোটে সুবিধা পায়। দার্জিলিঙের কালিংপং, দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, শিলিগুড়ি ও ফাঁসিদেওয়া বিধানসভায় বিপুল ভোট আছে মোর্চার। যা নিয়ন্ত্রণ করেন বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা। আবার আলিপুরদুয়ার লোকসভার একমাত্র ফালাকাটা বিধানসভা বাদ দিলে বাকি ৪ টি বিধানসভা আসনে ব্যাপক প্রভাব মোর্চার। বিমল গুরুং যদি পাহাড়ের পাশাপাশি তরাই-ডুয়ার্সেও তৃণমূলের পক্ষে ভোট করান তাহলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। 

ক’দিন আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন কুমারগ্রামের আদিবাসী নেতা লুইস কুজুর। অর্থাৎ এখন যা পরিস্থিতি তাতে আদিবাসী ও নেপালি ভোট পেতে তৃণমূলের সমস্যা হওয়ার কথা না। 

আবার জলপাইগুড়ি জেলার ৭ টি বিধানসভার মধ্যে ময়নাগুড়ি ও রাজগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫ টি বিধানসভা আসনে হার জিত নির্ধারণ করার মতো জায়গায় রয়েছে নেপালি ভোট। সেখানে বিমল গুরুঙ্গের সর্বাত্মক প্রভাব। 

পরিসংখ্যান বলছে, কখনও তৃণমূল, কখনও বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছে মোর্চা। যখন যেদিকে বিমল, সেই দলই বিপুল ভোট পেয়ে জয় পেয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যেবার মোর্চা বিজেপিকে সমর্থন করেছিল, ভাইচুং ভুটিয়ার মতো হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থীকেও হারতে হয়েছিল। আবার ২০১১ বিধানসভায় একবারই শিলিগুড়ি থেকে জিততে পেরেছিল তৃণমূল। সেবার নেপালি ভোট ঢুকেছিল ঘাসফুলের বাক্সে। 

ফলে রাজনীতির সমীকরণ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, বিমল গুরুং, রোশন গিরিরা এই ৩ জেলার ৯০ শতাংশ আসনে ফল উলটে দিতে পারেন। যা আশাবাদী করছে তৃণমূল শিবিরকে। কিন্তু একটি কাঁটাও আছে। বিমল গুরুং পাহাড় ছাড়ার পর মোর্চার সর্বময় নেতা হয়ে ওঠেন বিনয় তামাংরা। গুরুংপন্থীদের সবকটি পার্টি অফিসের দখল নেন তাঁরা। এবার গুরুং ফেরায় শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে তামাংপন্থীরা। এই পরিস্থিতিতে বিনয় তামাং বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। যদিও সেই সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না গুরুং। ৭ জানুয়ারি কালিম্পংয়ে জনসভা বিমল গুরুঙ্গের। জানুয়ারিতে মিরিকেও সভা ডাকতে চলেছেন। একে একে গুরুংপন্থী নেতারা বেরোতে শুরু করেছেন। গুরুংয়ের বাড়ি পাতলেবাসের পার্টি অফিস বহুদিন বাদে ফের গমগম করছে। বৃহস্পতিবার জামুনে, লেবং, বিজনবাড়ির পার্টি অফিস খুলেছেন গুরুংপন্থীরা। এই পরিস্থিতিতে পাহাড় ফের উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ প্রশাসন। গুরুংপন্থীদের একের পর এক পার্টি অফিসের দখল নিয়েছিলেন বিনয় তামাংয়ের অনুগামীরা। গুরুংপন্থীরা তার দখল নিতে শুরু করলে ফের আগুন জ্বলতে পারে পাহাড়ে। যদিও পাহাড় উত্তপ্ত হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না গুরুংপন্থীরা। তাঁরা বলছেন, বিমল গুরুং পাহাড়ে ফিরে এলে তিনিই মোর্চার সবচেয়ে বড়ো নেতা। গুরুংপন্থীদের সাফ কথা, গোলমাল হবে বিজেপির ভোট বাক্সে, পাহাড়ে নয়।

Comments are closed.