নোটবন্দির পর বাজেয়াপ্ত জাল নোটের ৫৬ শতাংশই ২০০০ টাকার নোট, সবচেয়ে বেশি গুজরাতে! জানাচ্ছে এনসিআরবি

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮ টা, ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাতিল হয়েছিল পুরনো ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট। সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কখনও কখনও দেশের সামনে এমন পরিস্থিতি আসে যখন সবাই চায় দেশের অগ্রগতিতে অংশগ্রহণ করতে। এটিও ঠিক তেমনই সুযোগ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ফলে দেশ কালো টাকা থেকে মুক্তি পাবে, কমবে জাল নোটের রমরমা।
নিয়ে আসা হয়েছিল নতুন ২০০০ টাকার নোট। আরবিআই-এর তরফে জানানো হয়েছিল, নতুন ২০০০ টাকার নোটে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার ফলে এই নোট জাল করা সহজ হবে না।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য কিন্তু অন্য কথাই বলছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত যত জাল নোট উদ্ধার হয়েছে, তার প্রায় ৫৬ শতাংশই ২০০০ টাকার নোট। যার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ২৮ কোটি টাকার ২০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। যা ছিল মোট উদ্ধার হওয়া মোট জাল নোটের প্রায় ৫৩ শতাংশ। এবং ২০১৮ তে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬১ শতাংশে। সব থেকে বেশি জাল নোট উদ্ধার হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাত থেকে। সেখানে ২০১৬-২০১৭ অর্থবর্ষে বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৬৮০ টি ২০০০ টাকার জাল নোট। যার মূল্য ৬.৯৩ কোটি টাকা, শতাংশের হিসেবে প্রায় ২৬ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা বেড়ে ২৮ শতাংশ হয়। এই দুই বছরে পশ্চিমবঙ্গে ৩.৫ কোটি টাকার, তামিলনাড়ুতে ২.৮ কোটি টাকার, উত্তরপ্রদেশের ২.৬ কোটি টাকার ২০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে।
তবে দিল্লি বাদে অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ঝাড়খণ্ড, মেঘালয় ও সিকিম থেকে ২০০০ টাকার কোনও জাল নোট উদ্ধার হয়নি।
এনসিআরবি’র রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে নোটবন্দি ঘোষণার পর ওই বছরের বাকি ৫৩ দিনের মধ্যে ২২৭২ টি জাল ২০০০ টাকার নোট উদ্ধার হয় দেশ থেকে, যার মূল্য প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। যা ওই সময় গোটা দেশে উদ্ধার হওয়া ২০০০ টাকার জাল নোটের ৫৭ শতাংশ ছিল। নোট বাতিল ঘোষণা হওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই গুজরাত থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রথম ২০০০ টাকার জাল নোট।
এছাড়াও আরবিআই একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ১৭ হাজার ৯২৯ টি জাল ২০০০ টাকার নোট ব্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে উদ্ধার হয়। ২০১৮—১৯ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৪৭ এ। এছাড়াও গত ২ বছরে উদ্ধার হয়েছে বিপুল ৫০০ টাকার জাল নোট।
গত এক বছর ধরে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ২০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধারের পরিমাণ বাড়তে থাকায় আরবিআই এই নোট ছাপানো এবং বাজারে ছাড়া বন্ধ করে দিয়েছে ধীরে ধীরে। যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি আরবিআই-এর তরফে।

Comments are closed.