ফেক নিউজ ঠেকাতে কঠোর আইন সিঙ্গাপুরে, ব্যক্তিগত পরিসরে সরকারি হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় বাসিন্দারা

ফেক নিউজ। এই কথাটির সঙ্গে পরিচয় হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ কিংবা অন্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিশেষ উদ্দেশে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়া এখন নতুন কিছু না। সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো ফেক নিউজ ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেও, বাস্তবে তা সমুদ্রে শিশির বিন্দুসম। এবার এই সমস্যা সমাধানে আইন আনল সিঙ্গাপুর সরকার। এই বিশেষ আইনের মাধ্যমেই দেশে ফেক নিউজ ছড়ানো বন্ধ করা যাবে বলে মনে করছেন সে দেশের সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু গোল বেঁধেছে তাতেই। ফেক নিউজ ঠেকাতে আনা আইন, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে গোয়েন্দাগিরি শুরু করবে না তো? আইন আনার সিদ্ধান্তকে বাহবা দিয়েও, এখন এই প্রশ্ন করছেন সিঙ্গাপুরবাসী।
সরকারের দাবি, দেশে শান্তি বজায় রাখতে এবং গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে একটি কড়া আইনের প্রয়োজন ছিল। তাই সব দিক বিবেচনা করেই এমন আইন আনা হয়েছে। কিন্তু, সাধারণ মানুষের কাছে ফেক নিউজ পৌঁছনো রুখতে কী মেকানিজম হবে, তা নিয়ে বিশেষ কিছু জানানো হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, নজরদারি চালাতে গিয়ে সরকার আইনের দোহাই দিয়ে ব্যক্তিগত পরিসরেও ঢুকে পড়বে কিনা, তা নিয়ে। সিঙ্গাপুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য, সরকার এখন থেকে সমস্ত ক্লোজড গ্রুপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সরাসরি নজরদারি চালাতে পারবে। এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন অর্থাৎ প্রেরক এবং প্রাপক ছাড়া আর কেউ বার্তা দেখতে পাবে না, নতুন আইন কার্যকর হলে, এই সুবিধাও থাকবে না সাধারণ মানুষের। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন আইন লাগু হওয়ার কথা। যদিও সিঙ্গাপুর সরকারের সাফ কথা, মুক্ত চিন্তায় বাধা দেওয়ার জন্য আইনটি ব্যবহার করা হবে না। বরং ফেক নিউজ ছড়ানোর জন্য তৈরি ফেক প্রোফাইলকে সঠিকভাবে খুঁজে বের করাই হবে এই আইনের আসল উদ্দেশ্য।
সম্প্রতি ভারত সরকার হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষকে এনক্রিপটেড ডেটা জমা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন সংস্থাটি সরাসরি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এবার সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে তারা কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার।
সরকারের এই আইনের কড়া সমালোচনা করেছে সিঙ্গাপুরের বিরোধী দল। তাদের দাবি, আইনের আড়ালে সরকার মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে দখলদারি কায়েম করতে চায়। কিন্তু বিরোধিতা সত্ত্বেও আইনটি পাস করাতে কোনও সমস্যাই হবে না। কারণ ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টির হাতে রয়েছে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এই আইনটি পাস হলেই সিঙ্গাপুর রাশিয়া, ফ্রান্স এবং জার্মানির সঙ্গে একাসনে বসবে।

Comments are closed.