কৃষি বিলে রাজ্যসভায় সংঘাত কাণ্ডে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে ভিডিও ফুটেজে অমিল, অসঙ্গতি!

রাজ্যসভায় বিরোধীদের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে কীভাবে সরকার একতরফা ভাবে কৃষি বিল পাস করিয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

এবার আরও গুরুতর অসঙ্গতি সামনে এল! প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারের বয়ান এবং রাজ্যসভা অধিবেশনের ভিডিও ফুটেজে সামনে এল এই অসঙ্গতি। গত ২০ সেপ্টেম্বর ধ্বনি ভোটে বিতর্কিত জোড়া কৃষি বিল পাসের সময় তুমুল অশান্তি হয়।

সেই দিন কৃষি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সময় গোলমাল করা এবং অসংসদীয় আচরণের দায়ে ৮ জন বিরোধী সাংসদকে বাদল অধিবেশন পর্বের জন্য সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেসের রাজীব সাতভ, সিপিএমের কে কে রাগেশরা সভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহকে নিগ্রহ করেছেন।

যদিও বিরোধীরা বারবারই পাল্টা অভিযোগ করেন, ডেপুটি চেয়ারম্যান তাঁর নিরপেক্ষতা পালন করেননি। গোটা বিরোধী শিবির, এমনকী, এনডিএ জোটের শরিক শিরোমণি অকালি দল ভোটাভুটির বা ডিভিশনের দাবি তুললেও তা খারিজ করে দিয়েছেন। সরকারকে বাঁচাতে একতরফা সিদ্ধান্তে ধ্বনি ভোটের মাধ্যমে বিল পাস করিয়েছেন।

সিপিএম সাংসদ কে কে রাগেশের অভিযোগ, বিরোধীরা প্রথমে বিল দু’টিকে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিল। প্রয়োজনে এ নিয়ে ভোটাভুটিতেও রাজি ছিল। কিন্তু ডেপুটি চেয়ারম্যান সে ক্ষেত্রেও ভোটাভুটি না করে ধ্বনি ভোটের মাধ্যমে দাবি খারিজ করেন। হরিবংশ এবং সরকার পক্ষের পাল্টা অভিযোগ, বিরোধী সাংসদরা যখন জোড়া বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো কিংবা ধ্বনি ভোটের বদলে ভোটাভুটির দাবি তুলেছিলেন, তখন তাঁরা নিজেদের আসনেই ছিলেন না। নেমে এসেছিলেন ওয়েলে। ফলে সেই দাবি মানা হয়নি।

যদিও রবিবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ত্রিচি শিবা, রাগেশ সহ দু-তিন জন বিরোধী সাংসদ নিজেদের আসন থেকেই বিতর্কিত এই বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানান। ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সেই দিন গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয় দুপুর ১ টা নাগাদ। বিরোধীরা অধিবেশনের সময়সীমা না বাড়িয়ে সে দিনের মতো সভা মুলতুবি করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছিলেন, বিল নিয়ে পরদিনও আলোচনা হতে পারে। মন্ত্রী জবাব দিতে পারেন। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর প্রস্তাব মেনে সভার সময়সীমা বাড়িয়ে দেন ডেপুটি চেয়ারম্যান।

রাজ্যসভার দীর্ঘদিনের সাংসদ ডিএমকের শিবা বলেন, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই অধিবেশনের সময় বৃদ্ধি করাই দস্তুর। ১২ টি বিরোধী দল পূর্ব নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী অধিবেশন মুলতুবির দাবি করেছিল। কিন্তু ডেপুটি চেয়ারম্যান তা উপেক্ষা করেন। তাঁর পদক্ষেপ সংসদীয় কার্যবিধির ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।

সেদিন বেলা ১টা ১১ নাগাদ রাগেশ নিজের ৯২ নম্বর আসন থেকেই বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভোটাভুটির দাবি জানিয়েছিলেন। তাঁর এক মিনিট আগে নিজের আসন থেকে একই দাবি তুলেছিলেন শিবা। তাঁর দাবি, সংসদীয় কার্যবিধির ২৫২(৪) (এ) উপ-অনুচ্ছেদ বলছে, সভা পরিচালনাকারী যদি দ্বিতীয়বারও প্রস্তাবের সঙ্গে অসম্মত হন, তবে ধ্বনি ভোটের বদলে ভোটাভুটি চাইবেন তিনি। যন্ত্রে বোতাম টিপে বা মাথা গুণে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের মতে সায় দেবেন। কিন্তু তা না করে ডিভিশনের বদলে হরিবংশ ধ্বনি ভোট করেন।

যদিও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, সংসদীয় বিধি মেনেই বিল পাসের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন প্রহ্লাদ। এ ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘু হিসেব করা হয় না। কিন্তু বিরোধীরা আসন ছেড়ে ওয়েলে নেমে এসে হট্টগোল শুরু করে দেন। যদিও ওই ফুটেজকে হাতিয়ার করে রাগেশের মন্তব্য, সাংসদেরা আসনে ছিলেন না বলে সরকার যে অভিযোগ করছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

 

Comments are closed.