দিন রাত্রির গল্প: বাঙালি মেয়ের মহাকাশ যাত্রা আর মানবিক সম্পর্কের মেলবন্ধন

বাংলায় প্রথম স্পেস ফিকশন, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানবিক সম্পর্ক। বাংলা সিনেমায় এই মুহূর্তে অবশ্যই একটি অন্যরকম কাজ পরিচালক প্রসেনজিৎ চৌধুরীর।
দিন রাত্রির গল্প আসলে দুটি আলাদা গল্প। প্রথম ভাগে অবশ্যই দিনের গল্প এবং শেষটি রাতের। দিন ও রাতের রূপক ব্যবহার করে বিজ্ঞান ও কুসংস্কারকে থ্রিলারের মোড়কে নিপুণভাবে পরিবেশন করেছেন পেশায় চিকিৎসক এই পরিচালক। দিনের গল্পে নাসায় কর্মরত বাঙালি কন্যাকে নিয়ে বাগুইআটিতে থাকা বাবা-মায়ের গর্ব যেমন আছে, তেমনি রয়েছে দূরদেশে থাকা সন্তানের জন্য চিন্তা। আবার যতই মেয়ে নাসার বিজ্ঞানী হোন না কেন, তাঁর মহাকাশ যাত্রা নিয়ে আটপৌরে বাঙালি পরিবারের ভয়-ভীতির কথাও খুব সরল আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে নাসার বিজ্ঞানী অরুণিমাকে মঙ্গলযানের কথা বাড়ি বয়ে দিতে চলে আসেন নাসার কিছু ‘এজেন্ট’। অসম্ভব এই ব্যাপারকে অরুণিমার মা আর সন্দেহবাতিক বাবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন সেই এজেন্টরা। কিন্তু কেন এই মিথ্যে নাটক? স্ত্রীর মঙ্গল অভিযানের কথা কেন দেশে ফিরে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে নিজে বলতে পারছেন না জামাই, সেই তীব্র টানাপোড়েনের উত্তর পেতে দেখতে হবে ‘দিন রাত্রির গল্প’।
দ্বিতীয় অংশে রাতের গল্প ঘনীভূত হয়েছে অজানা কিছু ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে। ডাকিনী বিদ্যা বা ব্ল্যাক ম্যাজিক, ভগবানে বিশ্বাস থাকা মানে ভূতেও বিশ্বাস করা দরকার, এমনই কিছু দ্বন্দ্ব ও তত্ত্ব ফুটে উঠেছে রাতের গল্পে। সেই গল্পের পর্দাফাঁস করলে থ্রিলার দেখার মজাটাই চলে যাবে। তবে এটুকু বলা যায়, ছবির শেষ অংশে মঙ্গল অভিযান, ভগবান ও ভূত তত্ত্ব ছেড়ে একটা মানবিক অনুভূতি পাবেন দর্শকরা। যার রেশ প্রেক্ষাগৃহ ছাড়ার পরেও থেকে যাবে।
এবার আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে। দিন ও রাত্রির গল্প আলাদা হলেও তার যোগসূত্র সুজান নামে চরিত্র। অভিনয় করেছেন সুপ্রীতি চৌধুরী। ছবির প্রথম দিকের চেয়ে শেষভাগে বেশি পরিণত দেখিয়েছে সুপ্রীতিকে। অরুণিমার চরিত্রে যথাযথ রায়াতি বসু। আলাদা করে বলতে হয় অরুণিমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করা সৌরভ চক্রবর্তীর কথা। সিরিয়াল থেকে ওয়েব সিরিজে ইতিমধ্যেই নিজের অভিনয় গুণ দেখিয়েছেন সৌরভ। বড় পর্দাতেও তাঁর মাপা অভিনয় দর্শকদের মনে রাখবে। প্রফেসরের চরিত্রে রজতাভ দত্তের অভিনয়, অভিব্যক্তি, ডায়লগ ডেলিভারি প্রশংসনীয়। এ রকম চরিত্রে আগে দেখা যায়নি রজতাভকে।
তবে সিনেমার গতি বেশ কিছু জায়গায় একটু এদিক-ওদিক লেগেছে। সম্পাদনা আরও ভালো করা যেতে পারে কিছু জায়গায়। শান্তনু দত্তর মিউজিকের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। তাছাড়া চিকিৎসক হিসেবে মানুষের মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতার উপর বানানো প্রসেনজিৎ চৌধুরীর চিত্রনাট্য, গল্প বলার ধরন বেশ অন্যরকম। মূলধারার মৌলিক বাংলা সিনেমা দেখতে চাইলে দর্শকরা নিরাশ হবেন না, এটুকু বলা যায়।

Comments are closed.