হাতি তাড়ানোর কাজে শূন্যপদ ২ হাজার, বনবিভাগের পাহারাদার পদে পিএইচডি, এমএসসি মিলিয়ে আবেদন ২০ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর

পদের নাম বন সহায়ক। শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পাশ। মূল কাজ হাতি তাড়ানো। এছাড়াও গাছের চারা লাগানো, বন দফতরের জমি রক্ষা সহ নানা কাজ করতে হবে। এই পদে আবেদন করেছেন পিএইচডি, এমএসসি যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরা। চুক্তিভিত্তিক এই কাজে বেতন ১০ হাজার টাকা। শূন্যপদ ২ হাজার। আর তাতেই মোট আবেদন জমা পড়ল ২০ লক্ষ!

এহ বাহ্য, বন সহায়ক পদে আবেদন করলেন বহু পিএইচডি, এমএসসি, এমএ পাশ যুবকরা। বনবিভাগের পাহারাদারের কাজে আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বহর দেখে চক্ষু চড়কগাছ বনকর্তাদের। সরকারি চাকরির প্রতি চিরন্তন মোহ নাকি কর্মসংস্থানের অভাব, এর জন্য দায়ী কে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সম্প্রতি রাজ্যের বনবিভাগ পাহারাদার চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। বুধবার ছিল এই আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। আবেদনপত্র জমা পড়ার পর দেখা গেল সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ লক্ষ।  এদিকে পদপূরণে কোনও লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। নিয়োগ হবে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে। এত বিপুল আবেদনকারীর ইন্টারভিউ কীভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। যোগ্যতার বিচারেই বা কাকে এগিয়ে রাখবেন তা নিয়েও কপালে ভাঁজ পড়েছে।

সূত্রের খবর, শুধু পুরুলিয়া জেলায় আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ নিতেই সময় যাবে অন্তত এক হাজার দিন! এদিকে সারা জেলার চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন নাকি চারটি বড় ট্রাঙ্কেও ধরেনি। ৪৫ টি বস্তায় ধরানো হয়েছে সেইসব আবেদনপত্র। শুধু পুরুলিয়াতেই লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে।

বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, বেশি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই প্রথমবার সিভিক ভলান্টিয়ারের ধাঁচে বন সহায়ক নিয়োগ হতে চলেছে। কিন্তু এত সংখ্যক আবেদনপত্র জমা পড়বে, তা কেউই ভাবতে পারেননি।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ক্রুটিনি শুরু হচ্ছে। কিন্তু সেখানে খুব বেশি আবেদনকারীর নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ এই পদের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি যোগ্যতার চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করেছেন। একমাত্র বয়সের কারণে কিছু আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই বেশিরভাগ আবেদনকারীই ইন্টারভিউয়ে ডাক পাবেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করবে তিন সদস্যের ইন্টারভিউ বোর্ড। বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ২ জন ডিএফও এবং একজন চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট। রাজ্যের ২৩টি জেলাকে ৯টি জোনে ভাগ করে ইন্টারভিউ চলবে।

কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। আধিকারিকদের কথায়, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১০০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে শুধু পুরুলিয়া জেলায় আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ নিতে গেলে এক হাজার দিন লেগে যাবে! এই সমস্যার কথা জানিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে ইন্টারভিউ বোর্ডের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি বলেন, আবেদনকারীর সংখ্যা স্ক্রুটিনির পর জানা যাবে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতেই পারে। প্রয়োজনে শনি, রবিবারও ইন্টারভিউ নেওয়া হবে বলে জানান বনমন্ত্রী।

পাহারাদারের কাজে ১০ লক্ষ উচ্চশিক্ষিত যুবকের এই আবেদনে কেউ দায়ী করছেন কর্মসংস্থানের অভাবের দিকে, কেউ বলছেন এটা আসলে সরকারি চাকরির প্রতি মধ্যবিত্তের চিরকালীন মোহ। চুক্তিভিত্তিক হলেও সরকারি চাকরি তো!

কারণ যেটাই হোক, বিপুল চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ কীভাবে হবে, এখন তা নিয়েই চিন্তায় বন দফতর।

Comments are closed.